সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

এমপির সঙ্গে দ্বন্দ্বে সেভেন স্টার

রাজশাহীতে ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি - ১

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে গত দুই সংসদ নির্বাচনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এবার সেটি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। আর এই আশঙ্কার নেপথ্যে রয়েছেন দলের সাত নেতা। বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরোধিতায় নেমেছেন তারা। স্থানীয়ভাবে এই সাত নেতার জোটকে ‘সেভেন স্টার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলীয় এমপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুণ্ডমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মকবুল হোসেন, প্রচার সম্পাদক ও গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু, গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান এবং জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল ওহাব জেমস। এই সাত নেতা যে কোনো মূল্যে এমপি ফারুক চৌধুরীকে নির্বাচনে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ফারুক চৌধুরী দলের ত্যাগী ও আদর্শবান নেতা-কর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন। তার কাছে এখন ভিড় করেছেন ‘বসন্তের কোকিলরা’। জামায়াত-বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আগতদের ভিড়ে হারিয়ে গেছেন দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা। এখন তারা মান, অভিমান আর ক্ষোভে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। সামনের নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। এমপি ফারুক চৌধুরীকে এর চড়া মূল্য দিতে হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে এমপি ফারুক চৌধুরী ও গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবুর সমর্থকরা একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সর্বশেষ ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মূলত কাঁকনহাটে এমপিবিরোধী সাত মনোনয়নপ্রত্যাশী একাট্টা হওয়ার পর থেকে উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এই সাত নেতার কর্মকাণ্ডে দলের অবস্থান খারাপ হচ্ছে বলে মনে করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। এর আগে দলের কিছু নেতার এমন অবস্থানের কারণে বিএনপি-জামায়াত সুবিধা পাবে। এখন থেকেই বিএনপি-জামায়াত সেই সুযোগ নিচ্ছে। দলের নেতা হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন, কিন্তু দলের কর্মসূচির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা ঠিক নয়। ক্ষমতাবান (এমপি) মানুষের ওপর অনেকেরই ক্ষোভ ও অভিমান থাকে। মানসিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য কিছু নেতা-কর্মী এমপির বিরুদ্ধে বলছেন। এমপি বিরোধী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, দলের ভিতরে যে ঐক্য ছিল, এই সাত নেতা তা ভাঙার চেষ্টা করছেন। দলের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিচ্ছেন। দলের মনোনয়ন চাইতে হলে, দলীয় শৃঙ্খলা মেনে কর্মসূচি পালন করা উচিত। কিন্তু ওই সাত নেতা ইচ্ছামতো দলের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিচ্ছেন। ফলে আগামীতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম বাবুর দাবি, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগের প্রথম দফার মেয়াদকালের শেষ পর্যায়ে শিল্প প্রতিমন্ত্রী হন ওমর ফারুক চৌধুরী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় দফা ফারুক চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের প্রবীণ নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করে নতুনদের গুরুত্ব দেওয়া, বিএনপি ও বিভিন্ন বাম সংগঠন থেকে আসা নেতা-কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া, জামায়াতপ্রীতি, গোদাগাড়ীর আলোচিত মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, শিক্ষক নিয়োগে ‘বাণিজ্য’, গোদাগাড়ী ও তানোরের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়, গোদাগাড়ী ও তানোরের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। ফলে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, বড় দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারেন। কিন্তু তার একটা পদ্ধতি আছে। কেন্দ্র যাকে মনোনয়ন দেবে, তিনিই নির্বাচন করবেন। কিন্তু ওই সাত নেতা দলীয় কর্মীদের বিভক্ত করছেন।

সর্বশেষ খবর