বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

অস্ত্র জমা দিয়ে ৫৯৫ চরমপন্থির আত্মসমর্পণ

পুনর্বাসন করা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পাবনা প্রতিনিধি

অস্ত্র জমা দিয়ে ৫৯৫ চরমপন্থির আত্মসমর্পণ

পাবনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গতকাল আত্মসমর্পণ করেন প্রায় ৬০০ চরমপন্থি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘২০০০ সালের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় চারু মজুমদারের কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জড়িয়ে পড়ি নিষিদ্ধ-ঘোষিত বাম সংগঠনের সঙ্গে। সেই থেকে অন্ধকার জগতের প্রভাবশালী জীবন যাপন আর পালিয়ে ফেরা। সরকার সুযোগ দিয়েছে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার। আমরা সে সুযোগ গ্রহণ করেছি। তবে আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করতে হবে। আমৃত্যু জননেত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে আত্মনিয়োগ করব।’ এভাবেই কথা দিলেন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল লাল পতাকার রাজশাহী-নওগাঁ এলাকার নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু। একই দলের পাবনা এলাকার ইকবাল শেখের স্ত্রী রত্না শেখ অত্যন্ত আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘আমার স্বামী নিষিদ্ধ-ঘোষিত দলের সঙ্গে জড়িত বলে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারিনি। দিনের পর দিন স্বামী পালিয়ে থাকায় অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন চালাতে হয়েছে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি এই ডিজিটাল যুগেও। খুবই কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হতো। আমার মতো অনেকের স্বামী আজ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন বলে সরকারকে ধন্যবাদ।’

এমনই ছিল উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থিদের জীবন। গতকাল পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন স্টেডিয়ামে জেলা পুলিশের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ১৫ জেলার ৫৯৫ জন চরমপন্থি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬১৪টি দেশি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন চরমপন্থি দলের সদস্যরা। এদের মধ্যে পাবনা, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, রাজবাড়ী, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলার সক্রিয় বিভিন্ন চরমপন্থি দলের সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেন। এসব দলের মধ্যে রয়েছে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল লাল পতাকা, পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি, নিউ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ও কাদামাটিসহ কয়েকটি সংগঠন। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আবদুল আলীম, বাবলু ব্যাপারী, ইকবাল শেখ, আবদুর রাজ্জাক আর্ট বাবু, আতাউর রহমান মোবারক, মহসীন আলী, মহসিন মল্লিক, ফারুক হোসেন মোল্লা, আবদুল্লাহ আল মামুন, লিপু মোল্লা ও রমজান আলীকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ পুরস্কার তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পাবনা সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, রাজশাহীর এনামুল হক এমপি, পাবনা-১ আসনের শামসুল হক টুকু, পাবনা-৪ আসনের শামসুর রহমান শরিফ ডিলু, পাবনা-সিরাজগঞ্জ মহিলা আসনের এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলি, আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন প্রমুখ।

 স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। তারা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। আত্মসমর্পণকারীদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে। অন্যদিকে তাদের পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক প্রণোদনাসহ সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে।

অনুষ্ঠানে মূল আলোচক আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সরকারের আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জলদস্যু, বনদস্যু, জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় চরমপন্থিরাও আত্মসমর্পণ করছেন। উগ্রপন্থি বিপথগামীদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে আমরা এই পন্থা অবলম্বন করেছি। তারা তো এ দেশেরই মানুষ। পথচ্যুতদের সুযোগ দিতে হবে বলেই চরমপন্থিদের এই আত্মসমর্পণ। চরমপন্থিরা বলেন, সন্ত্রাসী জীবনে জড়িয়ে পরিবার, স্ত্রী-সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়িয়েছেন। দিন-রাত মিলিয়ে খুব একটা ঘুমাতেও পারেননি। পুলিশ প্রশাসন আর প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সব সময় তাড়া করে ফিরত তাদের। অনিশ্চিত জীবনে ছিল না এতটুকু শান্তি। পরিবার-পরিজনের কাছাকাছি থেকে শান্তিতে জীবনের বাকি সময়টুকু কাটাতে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

সর্বশেষ খবর