মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-ব্রুনাই সাত চুক্তি স্বাক্ষর

প্রধানমন্ত্রী ও সুলতানের বৈঠক

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশ-ব্রুনাই সাত চুক্তি স্বাক্ষর

ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়া মুজাদাদিন ওয়াদাউল্লাহ তার সরকারি বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান

বাংলাদেশ ও ব্রুনাই গতকাল কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং এলএনজি সরবরাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ব্রুনাইয়ের সুলতানের সরকারি বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। খবর বাসস।

সাতটি চুক্তির মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি বিনিময় নোট। এগুলো হচ্ছে, কৃষি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ), মৎস্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক, পশুসম্পদ ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক, সাংস্কৃতিক ও শিল্প সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক, এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক এবং কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডারদের জন্য ভিসার ছাড় সংক্রান্ত বিনিময় নোট। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এমওইউ এবং বিনিময় নোট স্বাক্ষর করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রনাইর সুলতান হাসানাল বলকিয়া উপস্থিত ছিলেন। তিন দিনের সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ব্রুনাই রয়েছেন। নতুন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব : বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। গতকাল সকালে ব্রুনাইয়ের সুলতানের সরকারি বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমানে ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ার সঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব করেন। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, প্রস্তাবিত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (সিয়াকো) এর সদস্য হবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই। পররাষ্ট্র সচিব জানান, প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ব্রুনাইয়ের সুলতান আশ্বস্ত করেন যে, তিনি বিষয়টি নিয়ে ‘অনুকূল বিবেচনা’ করবেন। ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও বক্তৃতা লেখক নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্থান পায়। আলোচনাকালে শেখ হাসিনা ব্রুনাইয়ের সুলতানকে তার স্ত্রীসহ বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন যাত্রায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বিকালে হোটেল এম্পায়ার অ্যান্ড কান্ট্র্রি ক্লাবে বাংলাদেশ-ব্রুনাই বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন যাত্রায় আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশে উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যও আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উদার বৈদেশিক বিনিয়োগ সুবিধাগুলোর দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এসব সুবিধার মধ্যে রয়েছে আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা, উদার কর নীতি এবং যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর সুবিধাজনক শুল্ক ব্যবস্থা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প খাতের দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে  বাংলাদেশ কেবলমাত্র পাঁচ বছরে বার্ষিক রপ্তানি আয় দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, কৃষি ও সেবা খাতে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীলতা ও স্থিতিস্থাপকতা দিয়েছে। বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তা ও বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশজুড়ে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি এবং আইটি খাতের উন্নয়নে কয়েকটি শিল্প পার্ক স্থাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্ট খাতে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। চীনের পর, আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেডিমেড গার্মেন্ট রপ্তানিকারক দেশ।’ শেখ হাসিনা বলেন, মানসম্মত ঔষধের জন্য একটি বড় বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ দ্রুত গড়ে উঠছে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকাসহ ১০০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছি’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাহাজ নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো ইউরোপসহ ১৪টি দেশে যাত্রী ও মালবাহী জাহাজ সরবরাহ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সফটওয়্যার হচ্ছে বাংলাদেশের আরেকটি প্রতিশ্রুতিশীল শিল্প। ‘বাংলাদেশে ৮০০টি সফটওয়্যার ও আইটি কোম্পানি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৫০টিরও বেশি বিদেশের গ্রাহকদের সেবা প্রদান করছে।’ এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুটি দেশের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। মূল্যবোধ, ধর্ম, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং অনেক অভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে এ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সম্মানে গতকাল ব্রুনাইয়ের সরকারি বাসভবন ইসতানা নূরুল ইমানে রয়েল ব্যাঙ্কুয়েট হলে সুলতান আলহাজ হাসানাল বোলকিয়ার দেওয়া এক ভোজ সভায় এ কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর