সোমবার, ৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
ফিল্মি কাহিনি নয়

হারানো সন্তান এক যুগ পর মায়ের কোলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

হারানো সন্তান এক যুগ পর মায়ের কোলে

সাত বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়ার এক যুগ পর মায়ের কোলে ফিরল নাঈম। গতকাল সকালে যশোর সার্কিট হাউসে নাঈমের বাবা-মায়ের কাছে তাকে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আওয়াল, যশোর সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অসীত কুমার সাহা, যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান, প্রবেশন অফিসার মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ সময় পর বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে পেরে আপ্লুত হয়ে পড়ে নাঈম। শেষ পর্যন্ত ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি তার বাবা-মা-ও।  ২০০৬ সালের ৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে হারিয়ে যায় নাঈম। এরপর থানা-পুলিশ, আদালত হয়ে তার ঠিকানা হয় যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান বলেন, ২০০৭ সালের ১৪ মে মাগুরার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশের মাধ্যমে নাঈম যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে আসে। সে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। নিজের নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে না। এ অবস্থায় তার পিতা-মাতার খোঁজে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। টেলিভিশনেও তাদের নিয়ে নিউজ করা হয়। কিন্তু তার অভিভাবকের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কিছুদিন আগে একজন আনসার সদস্য বদলি হয়ে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে যোগদান করেন। নাঈমের বাড়ি তার শ্বশুরবাড়ির এলাকায় হওয়ায় তিনি তাকে শনাক্ত করেন। এরপর তার বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়। আদালত ও প্রশাসনিক সব কাজ শেষ করে তাকে তার পিতা-মাতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, নাঈমকে হস্তান্তরের সময় তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নাঈম যেহেতু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। সে কারণে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার সমাজসেবা দফতরে যোগাযোগ করা হয়েছে যাতে নাঈম প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে পারে। নাঈমের পিতা উমর আলী বিশ্বাস ও মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা এখন রাজবাড়ী জেলার পাংশায় থাকি। খুবই গরিব। রিকশা-ভ্যান চালিয়ে পেট চালাই। তারপরও ছেলেকে খুঁজে পেতে আমরা নানাভাবে চেষ্টা করেছি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিই। ছেলেকে এভাবে খুঁজে পাব কল্পনাও করিনি’। যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, নাঈমের মতো আরও ৮টি শিশু যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে রয়েছে, যাদের অভিভাবকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এই ৮টি শিশুর কেউই নিজেদের নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারে না। এদের বয়স ৮ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে।

সর্বশেষ খবর