রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা রক্ষায় আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা রক্ষায় আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা রক্ষায় যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের ত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্নে জাতির পিতা নেতৃত্ব দিলেও ইতিহাস বিকৃতকারীরা তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। তবে ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না, সত্য আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি দেশ গঠনে মনোনিবেশ করলেন। কিন্তু পাকিস্তানের দোসররা ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিল। আমাদের বাড়িতে যারা আসা-যাওয়া করতেন, আমার মা যাদের রান্না করে খাওয়াতেন তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, ৭৫-এর পর ২১টি বছর জাতির পিতার নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে আবারও মুছে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু পারেনি। সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পালন করতে পারছি। তিনি বলেন, বাংলাকে কেউ এখন দারিদ্র্য, দুর্যোগপূর্ণ ও ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত দেশ বলতে পারবে না। বাংলাদেশের একটি মানুষও যেন গৃহহারা না থাকে। যারা গৃহহীন তাদের আমরা ঘর করে দেব। প্রত্যেক মানুষের একটা ঠিকানা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ, তমদ্দুন মজলিশ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাকে। এদিন সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন। ১৫ মার্চ তারা মুক্তি পান। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বঙ্গবন্ধুকে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। জুলাই মাসের শেষে তিনি মুক্তি পান। ১৪ অক্টোবর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। কারাগার থেকেই তার দিকনির্দেশনায় আন্দোলন বেগবান হয়। সেই দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষা শহীদরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আমরা প্রযুক্তিকেও এগিয়ে নিতে চাই। প্রযুক্তির জ্ঞান ব্যবহার করে আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলব। শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলনের জন্য রক্ত দিয়ে যারা রক্তের অক্ষরে আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। লাখো শহীদের সেই আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না, বৃথা যেতে দেব না এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। শুধু অর্থনৈতিকভাবে না; আমরা প্রযুক্তিগত শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিয়েছি। সারা দেশে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার ও ইন্টারনেট সার্ভিস দেওয়া থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন সব কিছু ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার সঙ্গে প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিয়ে সারাবিশ্বে একটা সম্মানিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন।

বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। এখন আর কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। কারণ, আমরা খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত। ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ সব দুর্যোগ আমরা মোকাবিলা করতে শিখেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে মর্যাদাশীল দেশ। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে দলীয় সভানেত্রী বলেন, আপনাদের ওপর একটা দায়িত্ব সেটা হলো কোন লোকটা গৃহহারা আছে তা খুঁজে বের করা। একটি লোকও বাংলাদেশে গৃহহারা থাকবে না। গৃহহীনদের তালিকা তৈরি করেন। প্রত্যেককে ঘর করে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের অর্থনীতির শিক্ষক অধ্যাপক হায়দার আলী খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জামান কবিতা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, আবু আহম্মেদ মান্নাফী। ভাষা শহীদদের স্মরণে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি তারিক সুজাত। আলোচনা সভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

সর্বশেষ খবর