শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় আক্রান্ত ৯০ পোশাক কারখানা, অসুস্থ ১৯১ শ্রমিক

রুহুল আমিন রাসেল

তৈরি পোশাকশিল্পের ৯০টি কারখানায় ১৯১ জন শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে শিল্প পুলিশ। দেশের প্রধান এই রপ্তানি খাতে ঢাকার আশুলিয়ায় সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। এর পরেই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুজন পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর তথ্যও পাওয়া গেছে। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহনের তথ্য দিয়েছে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের কিছু কারখানার কিছু শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যখনি শ্রমিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তখনি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ওই শ্রমিকদের সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও ছুটিতে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। যে সব শ্রমিক মেসে থাকেন, তাদের পাঠানো হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। এক্ষেত্রে সব ধরনের খরচ মালিকরা বহন করছেন।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল  বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে সব কারখানার শ্রমিক আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের খোঁজখবর রাখছেন মালিকরা। আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় অর্থ খরচও করছেন মালিকরা। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পোশাকশ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রকৃত তথ্য প্রকাশ হচ্ছে না। যারা অসুস্থ বোধ করছেন, তারা বাসায় আছেন। অনেকে আক্রান্ত হলেও বলছেন না। ইতিমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুজন পোশাকশ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শ্রমিকরা আক্রান্ত হলেও অনেকে বুঝতে পারছেন না। সাধারণ একটু জ্বর, হাচি ও কাশি নিয়ে কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের কাছে একটা সাধারণ বিষয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে আক্রান্ত পোশাক কারখানায় সংস্পর্শে আসা শ্রমিকদের করোনা টেস্ট করানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শিল্প পুলিশ তাদের সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছে, সারা দেশের ৯০টি কারখানার ১৯১ জন পোশাক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই ৯০টি পোশাক কারখানার মধ্যে ৪৬টি কারখানা বিজিএমইএ সদস্য, যেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৫ জন শ্রমিক। বিকেএমইএ সদস্য ২১টি কারখানার ৫৭ জন, ইপিজেডগুলোতে অবস্থিত ১০টি কারখানার ১৪ জন ও অন্যান্য ১২টি পোশাক কারখানার ১৩ জন শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া বিটিএমএ সদস্য একটি টেক্সটাইল মিলসে দুজন শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে- সারা দেশের পোশাক কারখানার মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ায় সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। আশুলিয়ার ২৬টি কারখানার ৬১ জন শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরের অবস্থানে থাকা নারায়ণগঞ্জে ২৩টি কারখানার ৬০ জন শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। আর নারায়ণগঞ্জে ২৩টি কারখানার ৬০ জন শ্রমিক, চট্টগ্রামে ১৪টি পোশাক কারখানার ১৭ জন শ্রমিক, ময়মনসিংহে তিনটি কারখানার চারজন শ্রমিক এবং খুলনায় একটি কারখানার একজন শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শিল্প পুলিশ সদরদফতর পুলিশ সুপার- এসপি মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশের পোশাক কারখানাসমূহ মনিটর করছে শিল্প পুলিশ। আক্রান্ত শ্রমিকদের আইসোলেশনে পাঠানোর পাশাপাশি যারা সংস্পর্শে আসছেন, তাদেরও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইন মেনে। তবে মাঝে মাঝে শ্রমিকরা খুব একটা সতর্ক থাকছেন না। প্রসঙ্গত, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অধীনস্থ এলাকার ৮০০টি বাদে দেশের বাকি ৭ হাজার ৬০২টি পোশাক কারখানা শিল্পাঞ্চল পুলিশের অধীনস্থ।

সর্বশেষ খবর