শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা সংকটেও মে মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে

মে মাসে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৬ কোটি ডলার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা আঘাতে বিপর্যস্ত দেশের রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে তিনগুণ বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত মে মাসে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৬ কোটি ডলার যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৬২ শতাংশ কম হলেও গত এপ্রিলের মোট আয়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন ইউরোপ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল, সেই সময় গত এপ্রিলে ভয়াবহ ধস নামে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এই অন্যতম খাতটিতে। একক মাস হিসেবে গেল এপ্রিলে প্রায় ৮৩ শতাংশ পণ্য রপ্তানি আয় কমে যায়। সর্বসাকুল্যে ৫২ কোটি মার্কিন ডলারের আয় আসে ওই মাসে। এক মাসে এত কম হারে রপ্তানি বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের রপ্তানি খাত।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মে মাসের রপ্তানি আয় আমাদের আশাবাদী করে তুলছে। আমাদের ধারণা জুনে আয় আরও বাড়বে। তিনি বলেন, মার্চ থেকে লকডাউন ও পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় গত এপ্রিলে ব্যাপকভাবে রপ্তানি আয় কমে যায়। তবে এপ্রিল থেকে গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে আবার কাজ শুরু হয়, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই করোনা সংকটেও আগের বছরের তুলনায় দেশের প্রকৌশলী পণ্য (২৭ শতাংশ), হিমায়িত মাছ (২২ শতাংশ), সবজি (৬১ শতাংশ), ফলমূল (৫৩ শতাংশ), চা (১০ শতাংশ), তামাক (২৪ শতাংশ), কাঁচা পাট (১৬ শতাংশ), পাটের ব্যাগ (২৩ শতাংশ), জুট ইয়ার্ন (৮ শতাংশ), গ্লাস অ্যান্ড গ্লাসওয়্যার (১৬৯ শতাংশ) ফার্নিচার ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং পণ্য রপ্তানি আয় প্রায় ৩১ শতাংশ বেড়েছে। তবে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকে প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরের (জুলাই-মে) প্রান্তিকে ৩১৭ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এটি প্রায় ১৯ শতাংশ কমে গেছে। গত জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত পোশাক খাতের আয় দাঁড়িয়েছে ২৫৭ কোটি মার্কিন ডলার। ওভেন ও নিট দুটি খাতেই ১৯ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি কমেছে। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান জানান, দেশের রপ্তানি আয় পোশাক খাতনির্ভর হলেও করোনা সংক্রমণের কারণে এখন মেডিকেল সরঞ্জাম, পিপিই, স্যানিটাইজার, মাস্কসহ অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। কারণ দেশে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল আমদানি হয় মূলত চীন থেকে। ফলে সরবরাহজনিত সংকট শুরু হয়। এরপর মার্চ থেকে আবার পোশাক খাতের গন্তব্য ইউরোপ-আমেরিকায় কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ে। তখন দেখা যায় চাহিদাজনিত সংকট। ক্রেতারা অনেক কারখানার অর্ডার বাতিল করেন। কেউ কেউ অর্ডার স্থগিত করে দেন। তবে খুব দ্রুতই সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে মে মাসের রপ্তানি আয়ে।

সর্বশেষ খবর