শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

চান্দ নাগের চর জমিদারবাড়ি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

চান্দ নাগের চর জমিদারবাড়ি

দীর্ঘ ১২৮ বছরের মুসলিম জমিদারবাড়িটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃহত্তর দাউদকান্দি উপজেলা থেকে ভাগ হয়ে আসা তিতাস উপজেলায় অবস্থিত এ জমিদারবাড়িটি তিতাস উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ও দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। নিপুণ কারুকাজম-িত তিনটি বাড়ি নির্মাণ করেন জমিদার মাহতাব ভুইয়া। এতে ২৩টি কক্ষ রয়েছে। প্রথম ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ৩টি করে ৬টি কক্ষ, দ্বিতীয় ভবনের নিচতলায় ৫টি। দ্বিতীয় তলায় ৩টি কক্ষ এবং তিন তলাবিশিষ্ট তৃতীয় ভবনের প্রথম  তলায় ৪টি, দ্বিতীয় তলায় ৪টি ও তৃতীয় তলায় রয়েছে ১টি বারান্দার মতো খোলা কক্ষ। এ জমিদারবাড়িটির পাশে রয়েছে শৈল্পিক কারুকার্য খচিত কয়েকটি কক্ষ, রয়েছে একটি আন্ধার কোটা; যেখানে রাখা হতো কাঁচা পয়সা ও স্বর্ণমুদ্রা, একটি মসজিদ যা এখন সংস্কার করা হয়েছে মুসল্লিদের নামাজের জন্য, বৈঠকখানা যেখানে বসে জমিদাররা বিচারকাজ পরিচালনা করতেন। রয়েছে একটি ৬০ ফুট গভীর ইঁদারা বা কূপ। এ কূপের পানি মুসল্লিরা অজুর কাজে ব্যবহার করতেন। আজও মুসল্লিরা এ কূপের পানি ব্যবহার করেন, যদিও সংস্কারের অভাবে পানি থেকে দুর্গন্ধ আসে। দীর্ঘদিন ধরে অযতœ-অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে জমিদারবাড়িটি। ভেঙে পড়ছে এর অবকাঠামো। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে বাড়িটি তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ফুল মেহের বিবি (৯৮) জানান, ১২৮ বছর নয় মাস আগে নির্মিত জমিদারবাড়ির এ তিনটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল বাংলা ১২৯৯ সালে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছিল ১৩০৬ সালে। ভবন তিনটি নির্মাণে ইটের জোগান দিতে জমিদার মাহতাব ভুইয়া নিজেই একটি ব্রিক ফিল্ড তৈরি করেছিলেন। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আবদুস সামাদ ভুইয়া (৮৫) ও জসিম উদ্দিন ভুইয়া (৭৫), সমাজসেবী মো. মহসিন মাস্টার, হাসান মো. ডালিম ভুইয়াসহ অনেকে জানান, জমিদার মাহতাব ভুইয়া মারা যাওয়ার পর তার দুই ছেলে আশরাফ ভুইয়া ও আরমান ভুইয়া জমিদারি দেখভাল করতেন। পরে নাতি মুল্লুকচাঁদ ভুইয়া, নজুমদ্দিন ভুইয়া, আলিমুদ্দিন ভুইয়া, উজির ভুইয়া, নজির ভুইয়া, কালাই ভুইয়া, মজু ভুইয়াকে জমিদারবাড়িটিতে বসবাস করতে দেখা গেছে। এক পর্যায়ে তার উত্তরসূরিরা কেউ গ্রামে, কেউ শহরে, কেউ আবার বিদেশ পাড়ি দেওয়ায় বাড়িটি অযতেœ অবহেলায় পড়ে আছে। মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জমিদারবাড়িটি এ ইউনিয়নের ঐতিহ্য। এটি সংরক্ষণ ও দর্শনীয়ভাবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. রাশেদা আক্তার বলেন, ‘জমিদারবাড়িটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ এ বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে মুসলিম জমিদারবাড়ির সংখ্যা খুবই কম। পরিদর্শন শেষে এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর