বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই বাবার নির্মম কাণ্ড

চট্টগ্রামে দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা, ঢাকায় নিজের সন্তানকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও ঢাকা

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের ভান্ডারগাঁও এলাকায় এক বাড়ি থেকে দুই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, তাদের  শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। দুই মেয়েকে হত্যার পর তাদের পিতা মুকুন্দও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গতকাল ভোরে ভান্ডারগাঁও গ্রামের বড়ুয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো মুকুন্দ বড়ুয়ার মেয়ে টুকু বড়ুয়া (১৪) ও নিশু বড়ুয়া (১০)। তারা স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। অন্যদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে নিজ সন্তানকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগে বাবাসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।   

পুলিশ জানায়, কক্সবাজারের চকরিয়ার বাসিন্দা মুকুন্দ বড়ুয়া জাহাজে চাকরি করতেন। চার বছর আগে তার স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে দুই মেয়ে পটিয়ার মামার বাড়িতে থাকে। লকডাউনের পর চাকরি থেকে এসে মুকুন্দও শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উদ্দীন বলেন, ‘রাতে কোনো এক সময়ে দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। দুই মেয়ের লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি তাদের পিতা মুকুন্দকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে হতাশা থেকে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।’

মুক্তিপণের জন্য শিশু সন্তানকে অপহরণের পর হত্যা বাবাসহ গ্রেফতার ২ : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে শিশু সন্তান হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বাবা মো. জুলহাসসহ (৩১) দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতার অন্যজন হলো মো. জুয়েল ব্যাপারী। র‌্যাব বলছে, স্ত্রী’র পরিবারের কাছ থেকে যৌতুক আদায়ে ব্যর্থ হয়ে নিজ সন্তানকেই অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে তার বাবা। অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর কারণেই হয়তো ৩ বছর ৭ মাস বয়সী শিশু মাহিমের মৃত্যু হয়েছে।

র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. কাইয়ুমুজ্জামান খান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। জন্মদাতার হাতেই খুন হয়েছে তার সন্তান। তবে কি কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে। প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পেয়ে মাতুয়াইল মৃধাবাড়ি রাজমহল হোটেলের সামনে থেকে জুয়েল ব্যাপারী (২০), পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জুলহাস ওরফে ফারুক ওরফে গুড্ডাকে মাতুয়াইল দরবার শরীফ মোড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন মাহিমের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব বলছে, বিয়ের পর থেকেই জুলহাস বিভিন্ন সময় যৌতুকের টাকা দাবি করে আসছিলো তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কাছে। সবশেষ বিদেশ যাওয়ার জন্য ৪ লাখ টাকা দাবি করে ব্যর্থ হলে স্ত্রীকে নির্যাতন করছিল। পারিবারিক কলহ এবং শ্বশুর বাড়ি থেকে টাকা না পেয়ে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে নিজ সন্তানকেই হত্যার জন্য প্রতিবেশী জুয়েলকে নিয়ে পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী, গত ২৭ জুন মাহিমকে অপহরণ করে মাতুয়াইল বাসস্ট্যান্ডে তার বাবার কাছে নিয়ে যায় জুয়েল। পরে জুসের সঙ্গে ৮টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করায়। মৃত্যু নিশ্চিত হলে ওইদিনই সন্ধ্যায় মাহিমকে মাতুয়াইল মৃধাবাড়ী ময়লার ডিপো সংলগ্ন গ্রীন মডেল টাউন এলাকায় কাশবনের ভিতর বালু চাপা দেওয়া হয়। ছেলে অপহরণ হয়েছে উল্লেখ করে ২৯ জুন জুলহাস যাত্রাবাড়ী থানায় একটি জিডি করে।

 ঘটনার সত্যতা প্রমাণের জন্য ২৯ জুন জুয়েলকে দিয়ে মুক্তিপণ চেয়ে নিজের মোবাইলে একটি ম্যাসেজ পাঠায়। প্রথমে ২০ লাখ পরবর্তীতে ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চাওয়ানো হয়। ওইদিনই র‌্যাব-১০ এ এসে জিডির কপিসহ একটি অভিযোগ করে তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর