ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রদল ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের জবাবকে ‘অত্যন্ত অস্পষ্ট’ আখ্যা দিয়েছে ছাত্রদল। তারা বলেছে, অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে সাদা দল ডাকসু নির্বাচনকে ‘নজিরবিহীন জালিয়াতি ও অনিয়ম’-এর উদাহরণ দাবি করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল দেওয়া সাদা দলের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যদি দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন ফ্যাসিবাদের আমলে অনুষ্ঠিত অবৈধ নির্বাচনের মতোই শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার হরণের একটি কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে।’
এদিকে গতকাল দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনের পর ১১টি অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। সেগুলো যাচাইবাছাই না করেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আবেদনকে ‘অনির্দিষ্ট’ ও ‘সারবত্তাহীন’ আখ্যা দিয়েছে। অথচ ছাত্রদল প্রার্থীরা হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের নির্দিষ্ট বুথের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার আবেদন করেছিলেন- যাকে প্রশাসন অনির্দিষ্ট বলেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ভোট কেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ ‘পাবলিক ডকুমেন্ট’ নয় জানার পরও প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ব্যক্তিগতভাবে ফুটেজ দেখার আবেদন করেছিলেন। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবল সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়েছে। এতে তাদের আন্তরিকতার অভাব স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবি করে ছাত্রদল। তারা প্রশ্ন তোলেন, ‘তাহলে কি প্রশাসনের সেই তথাকথিত ‘যথাযথ প্রক্রিয়া’ কেবল কালক্ষেপণ ও অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল?’ ছাত্রদল আরও অভিযোগ করে, ভোট গ্রহণ চলাকালে কোনো পোলিং এজেন্টকে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলেও এর সঠিক তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাড়া কারও কাছে নেই। এ ছাড়া ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে ছাপানো হয়েছে দাবি করে ছাত্রদল জানায়, প্রশাসন অস্বীকার করলেও গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রমাণিত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল এক বিবৃতিতে নির্বাচনকে ‘প্রহসনমূলক’ বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
দলটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম এবং অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকারের যৌথ স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি নিউজ টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ডাকসু নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সাদা দলের নেতারা বলেন, এসব অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগগুলোর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর-বাইরের সদস্য নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নতুন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তারা।