বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

দক্ষিণে বাড়ছে পানি, কমছে উত্তরে

বানভাসিদের দুর্ভোগ কমছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি এবং জোয়ারের চাপে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বরিশালের লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি। একই চিত্র লক্ষ্মীপুরেও। মেঘনা নদী তীরবর্তী এলাকায় হঠাৎ পানি ঢুকে ভেসে গেছে হাজারো ঘর-বাড়িসহ অসংখ্য মাছের ঘের। অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে জেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম ভেসে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে ভোলা-বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট ঘাটের ফেরি চলাচলও। সব মিলে ১৫ নদীর ২৪ স্টেশনে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তার পানি কমছে। ফলে বগুড়া, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে পানি কমলেও বানভাসিদের দুর্ভোগ কমছে না। লাখ লাখ মানুষ উঁচু বাঁধ, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়ে এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। 

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য- বরিশাল : উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি এবং জোয়ারের চাপে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল স্রোতের কারণে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। উজানের পানি ও জোয়ারের চাপে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বরিশালের লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। বরিশাল নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের সময় পানির নিচে তলিয়ে যায়। বাসা-বাড়ি, গ্যারেজ, দোকানে পানি ঢুকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। এ ছাড়া শহরের বাইরে নদীসংলগ্ন এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কীর্তনখোলা নদীর পানি ২.৫৫ (বিপৎসীমা) অতিক্রম করে ২.৮৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে অন্তত ৩০টি গ্রাম ভেসে গেছে। মেঘনা নদী তীরবর্তী এলাকার ৪টি উপজেলার এসব গ্রামে গতকাল বিকালে হঠাৎ পানি ঢুকে ভেসে গেছে হাজারো ঘর-বাড়িসহ অসংখ্য মাছের ঘের। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে ঢুকছে পানি। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। বন্ধ রয়েছে ভোলা-বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট ঘাটের ফেরি চলাচলও। এসব অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নদী তীরবর্তী প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানান, বিকালে মেঘনায় হঠাৎ জোয়ারের পানি অতিরিক্তভাবে বাড়তে থাকে। দুই ঘণ্টার মধ্যে চরাঞ্চলসহ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে পানি। ঘর বাড়িতে পানি ঢুকতে দেখে নারী-শিশুসহ সবাই ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসে। বিগত এক যুগের মধ্যেও কেউ জোয়ারের এমন অতিরিক্ত পানির চাপ দেখেনি বলে জানান তারা। রায়পুরে ১২ গ্রাম প্লাবিত : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে  মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় ৪টি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি আটকে থাকার কারণে  বেড়িবাঁধের বাহিরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গত ৩ দিনে মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে ফসলের। জামালপুর : যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য শাখা নদীগুলোর পানি কমতে থাকায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার কমে গতকাল বিকালে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাই, জিঞ্জিরামসহ অন্যান্য শাখা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

বন্যায় তলিয়ে থাকা বসতবাড়ি  থেকে পানি নামতে শুরু করায় অনেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে, তবে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বসতবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় এখনই ঘরে ফিরতে পারছে না বেশিরভাগ বন্যা দুর্গতরা। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে সব নদ-নদীর পানি দ্রুতই কমছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমরসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এদিকে, পানি কমলেও বানভাসিদের দুর্ভোগ এখনো রয়েছে। দীর্ঘ দেড় মাস ধরে পানিবন্দী জেলার ৯ উপজেলার সাড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষ নদ-নদীর পানি কমা-বাড়ার মধ্য দিয়ে উঁচু বাঁধ, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছে। বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীতে পানি কমেছে। বন্যার পানি কমতে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নয়নের পথে যাচ্ছে। দু-একজন ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিলেও অধিকাংশ উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়ে আছে। বানভাসিরা এখনো ঘরে ফেরেনি। ঈদের আগে বগুড়ার যমুনা নদীসংলগ্ন সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে  আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার সারিয়াকান্দিসহ যমুনা তীরবর্তী সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার প্রায় ৩২ হাজার ৩৪২ পরিবারের ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। প্রবল বর্ষণও উজানের ঢলে বগুড়ায় যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়। এদিকে বগুড়া সদরের সাবগ্রাম কুদরতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনের আয়োজনে সারিয়াকান্দির চর এলাকার প্রায় ১ হাজার ৫০০ পরিবারের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর