শিরোনাম
শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পরীক্ষা না নিয়েও ফি নিচ্ছে কলেজগুলো

করোনার কারণে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান না থাকলেও টিউশন ফি আদায় থেমে নেই

আকতারুজ্জামান

করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান না থাকলেও টিউশন ফি আদায় থেমে নেই। এ ছাড়া কোনো পরীক্ষা নেওয়া না হলেও পরীক্ষার ফি আদায় করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। অভিভাবকরা বলছেন, করোনাকালে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে টিউশন ফি-তে নির্দিষ্ট শতাংশ ছাড় দেওয়া উচিত কর্তৃপক্ষের। আর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরীক্ষা না নিয়েও পরীক্ষার ফি আদায় করছেন তারা একেবারেই অনৈতিক কাজ করছেন। পরীক্ষার ফি ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তথ্যমতে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে টিউশন ফি, সেশন চার্জের পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে পরীক্ষার ফিও। দ্বাদশে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, প্রতি মাসে ২ হাজার ১০০ টাকা টিউশন ফির পাশাপাশি তিন হাজার টাকা শেসনচার্জ, দেড় হাজার টাকা পরীক্ষার ফিসহ ম্যাগাজিন ফি, উৎসব ফি, কালচার ফিসহ অদ্ভুত সব ফি আদায় করা হয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছে সবমিলে ৮ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করেছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ সুজন বলেন, পরীক্ষা না নিয়েও পরীক্ষার ফি আদায় করা অমানবিক, অযৌক্তিক, অনৈতিক। পরীক্ষার ফি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়াও করোনাকালে নিয়মিত টিউশন ফি মওকুফের দাবি জানিয়ে শিক্ষা সচিব বরাবর সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে ফোরাম। পরীক্ষা না নিয়ে ফি গ্রহণের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়াকে  মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে গ্রহণ করেননি। মোবাইলে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষার ফি আদায় করেছে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কর্তৃপক্ষও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক ছাত্রী প্রতিবেদককে জানায়, করোনাকালে কলেজটিতে কোনো পরীক্ষা না হলেও অটোপ্রমোশনের কথা বলে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করেছে শিক্ষার্থীদের। এই বাবদ মাসিক টিউশন ফি ১ হাজার ২০০, ভর্তি ফি ৭ হাজার ২৮৫, আইসিটির ব্যবহারিক ফি ৪০০, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফি ৫৫০ ও ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা আদায় করেছে। এদিকে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের অনবরত মোবাইল মেসেজের চাপে মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত টানা ছয় মাসের টিউশন ফি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, পরীক্ষার ফি-সহ আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে তৃতীয় শ্রেণির মাসিক টিউশন ফি দেড় হাজার টাকা। করোনায় স্কুল বন্ধ রয়েছে, কোনো পরীক্ষাও নেওয়া হয়নি। তবু পুরো টিউশন ফি পরিশোধ করতে হয়েছে অভিভাবকদের। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে- এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জিম্মি করছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো স্কুল থেকে মেসেজ পাঠিয়ে সাফ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বকেয়া টিউশন ফি পরিশোধ না করলে রেজিস্ট্রেশন করতে দেওয়া হবে না। করোনার এ সংকটময় মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এমন বার্তা পেয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অথচ সম্প্রতি শিক্ষাবোর্ডের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে- মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি থাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফির জন্য চাপপ্রয়োগ করা যাবে না। শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁইয়া এই লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন গত ১৬ আগস্ট শুরু হয়েছে, চলবে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, রেজিস্ট্রেশনের সময় এসে চাপ দিয়ে বকেয়া সব টিউশন ফি কৌশলে আদায় করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এভাবে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর