শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্যার ক্ষতির প্রভাব রাজধানীর বাজারে

ফের বাড়ছে নদীর পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের কৃষিপ্রধান ৩৩টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দেড় মাসের বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে জমির ধান, পাটসহ সব ধরনের সবজি। ভেসে গেছে চাষের মাছ। এতে শুধু কৃষকই পথে বসেনি, কৃষিপণ্যের ক্ষতির ঢেউ এসে লেগেছে রাজধানীর বাজার পর্যন্ত। বেড়ে গেছে কাঁচামরিচ, বেগুন, পটোল, করলাসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম। গতকালও রাজধানীতে বাজারভেদে কাঁচামরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পটোল ও ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং লাল গোল বেগুন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই মাস আগেও এসব সবজির দাম কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কম ছিল। দোকানিরা বলছেন, উত্তরবঙ্গ থেকে সবজি কম আসছে। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করছেন। এদিকে টানা ৪৬ দিন বন্যার পর বর্তমানে দেশের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গতকাল সকালেও ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৪১টিতে পানি বেড়েছে। অবশ্য বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গত ২ সেপ্টেম্বরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, পানি বাড়লেও ১০ দিনের মধ্যে দেশের কোনো নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের শঙ্কা নেই। তাই এই সময়ের মধ্যে নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা নেই।

বন্যাদুর্গত জেলাগুলোর সর্বত্র এখন বন্যার ক্ষতচিহ্ন। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট দিয়ে চলাচল করতে বাসিন্দাদের যেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তেমনি অনেক এলাকা থেকে পণ্য পরিবহনও সংকটে পড়েছে। এতে বন্যাক্রান্ত জেলাগুলোর যেসব এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেনি, সেখান থেকেও কৃষিপণ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাজারমূল্যের ওপরে। কৃষির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ফের লাঙল নিয়ে জমিতে নেমেছে কৃষক। সরকারের তরফ থেকে চারা, বীজসহ নানা কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে। এদিকে উত্তরে বন্যার পানি নামলেও দক্ষিণের উপকূলীয় অনেক এলাকা এখনো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। আবার কোথাও গত সপ্তাহে বাঁধ ভেঙে প্রবেশ করা পানি এখনো বের হতে পারেনি। তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

বেতাগী (বরগুনা) : সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টিপাত ও অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে বিষখালী নদীর পানি বিগত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বেতাগীতে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, সড়ক ও বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নোয়াখালী : বেড়িবাঁধ না থাকায় গত দুই সপ্তাহে অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় তিন থেকে চার হাজার একর কৃষি জমির শসা, করলাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক। সুবর্ণচর ও হাতিয়ায় শসা, করলা, ঢ্যাঁড়শ, কুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজি বেশি হয়।

নওগাঁ : বন্যায় নওগাঁর কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গতকাল ৪৪ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে প্রণোদনা সহায়তার আওতায় নাবি জাতের (বিআর-২২) রোপা আমন ধানের চারা বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক।

গাইবান্ধা : তিন দফা বন্যায় গাইবান্ধার ছয় উপজেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার চারটি উপজেলা ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদরের  ১৫০টি চরের কাঁচা-পাকা রাস্তা ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে  বেশি। মোট ছয়টি উপজেলার ২৪ হাজার ২০৬ কিলোমিটার রাস্তা এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে। রাস্তা সংস্কার শুরু না হওয়ায় বন্যার ক্ষতির ছাপ এখনো দৃশ্যমান। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার বন্যায় জেলার ছয় উপজেলার ৪৫ ইউনিয়নের ২৬৭ গ্রামের মোট ৫৪ হাজার ৩২৫ পরিবারের ২ লাখ ৫২ হাজার ৪১০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব মানুষের জন্য সরকারিভাবে  ৭০৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ছয় লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ১২ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।

রংপুর : বন্যায় এ অঞ্চলে ১৪ হাজার হেক্টর জমির ১৭৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ছয় হাজার ৪৪১ হেক্টর জমির পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় হাজার ৪৪১ হেক্টর জমির আউশ, এক হাজার ১৬৬ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, এক হাজার ২৪৪ হেক্টর জমির শাক-সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি বিভাগও কাজ করছে। তারা ২২১ একর জমিতে নাবি জাতের বীজতলা করেছে। এছাড়া ভাসমান বীজতলা করেছে ৫০০ একর এবং ৩৬৮ জনকে ট্রের মাধ্যমে বীজতলা করে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া ২৮ হাজার ২০ জনকে ১৪ প্রকার সবজি বীজ দেওয়া হয়েছে। তিন হাজার ৯০০ জনকে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর