শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ণাঢ্য কারাম উৎসব

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ণাঢ্য কারাম উৎসব

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল ও বকাপুর গ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ওঁরাও, মুন্ডা ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন ‘ডাল পূজাকে’ কেন্দ্র করে কারাম উৎসব উদযাপন করেছেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় এ উৎসব পালিত হয়। বিকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উদ্যোগে নাটশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কারাম মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর ভাদ্র মাসে এর তিথি আসে। কারাম একটি গাছের নাম। যাকে আমরা খিল কদম নামে চিনি। আদিবাসীদের মতে পবিত্র গাছটি তাদের মঙ্গলের প্রতীক। বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে বিকাল ৪টায় মেলার উদ্বোধন করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। উদ্বোধন শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নওগাঁর মহাদেবপুর, পতœীতলা, নিয়ামতপুর ও ধামইরহাট উপজেলা ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা থেকে আসা বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন মেলায় অংশ নেয়। করোনার কারণে এবার সীমিত পরিসরে সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আগের বছরগুলোতে ৩০-৪০টি সাংস্কৃতিক দল একসঙ্গে নাটশাল মাঠে নাচ-গান পরিবেশন করলেও এবার ২০টি সাংস্কৃতিক দল নাচ-গান পরিবেশন করে। নাচে-গানে ও ঢোল-মাদলের আওয়াজে মাতোয়ারা হয় নাটশাল মাঠ। সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। নাটশাল কারাম মন্দিরের পুরোহিত কার্তিক ওঁরাওয়ের সভাপতিত্বে¡ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিষয়ক গবেষক ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আতাউল হক সিদ্দিকী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহাদেবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আহসান হাবিব, বাসদ নওগাঁ জেলা কমিটির সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন, আরকোর নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা ময়নুল হক মুকুল, ওয়ার্কার্স পার্টির শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন, বাসদের জয়নাল আবেদীন মুকুল, জাতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির আজাদুল ইসলাম আজাদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সবিন মুন্ডা, রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান প্রমুখ।

 সভায় বক্তারা ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান। আলোচনা শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক দলগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়। আগের দিন সন্ধ্যায় নাটশাল ও বকাপুর গ্রামে কারাম পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতভর গ্রামের আখড়ায় পুঁতে রাখা কারাম (খিল কদম) ডালকে ঘিরে নাচ-গান অনুষ্ঠিত হয়। সকালে আখড়া থেকে কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে-গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শেষে গ্রামের পুকুরে বিসর্জন দেয়। কারাম উৎসবকে ঘিরে ওঁরাও গ্রামগুলোতে প্রস্তুতি চলে ১৫-২০ দিন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত নাচ-গান চলে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এ উৎসবের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে।

সর্বশেষ খবর