শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাঁচ টাকায় নবাবি গোসল

মোস্তফা কাজল

পাঁচ টাকায় নবাবি গোসল

নবাবদের পুকুরে পাঁচ টাকায় করা যায় নবাবি গোসল। শুধু কি গোসল, সাঁতারও কাটা যায় পুকুরের টলটলে স্বচ্ছ পানিতে। এ হচ্ছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নবাববাড়ি পুকুর। উৎসব ও পূজায় অনেকে মেতে ওঠে জলকেলিতে। ঐতিহ্যবাহী নয়নাভিরাম এ পুকুরটির চারপাশ নারকেল গাছ ও সবুজে ঘেরা। পাড়ে দাঁড়ালে দক্ষিণের শীতল হাওয়া দেহ ও মন জুড়িয়ে দেয়। রয়েছে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বেঞ্চ। মহিলাদের জন্য রয়েছে ভোরে হাঁটার ব্যবস্থা। পুকুরে চাষ করা হয়েছে রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউশ, চিতলসহ হরেক রকমের মাছ। বিশেষ দিনে টিকিট কেটে মাছ ধরার ব্যবস্থা আছে। চাইলে নবাববাড়ির সদস্যদের বাইরের লোকজনও অংশ নিতে পারে এসব কর্মকান্ডে। ইতিহাসের নীরব সাক্ষী এ পুকুর। কিছুদিন আগে সরকার একে ঐতিহ্যবাহী পুকুর ঘোষণা করেছে। এ পুকুরে সব ধর্মের লোকজন গোসল করে। এর মধ্যে নারী, পুরুষ, তরুণ ও তরুণী সবাই টাকার বিনিময়ে গোসল করতে পারে। নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ লোক গোসল করে। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে নবাবদের শাসন অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু বিনষ্ট হয়নি তাদের তৈরি প্রাসাদ ও প্রাসাদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নানা স্থাপনা। পুরান ঢাকার ইসলামপুরে এমনি এক ঐতিহ্য নবাববাড়ি পুকুর। একসময় গোলাকৃতি পুকুরটিকে নবাবরা ‘তালাভ পুকুর’ নামে ডাকতেন। মৌলভি খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মালিকানাধীন পুকুরই হলো নবাববাড়ি পুকুর। তবে পুকুরের পানি মাছ চাষের উপযোগী রাখতে সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার এবং কাপড় ধোয়া নিষেধ। প্রায় সাড়ে ৭ বিঘা আয়তনের এ পুকুর। গোলাকৃতির পুকুরটির চার পাড় তিন ফুট দেয়ালের ওপর লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা। গতকাল দেখা গেছে, পুকুরের পুবপাড়ের ঘাটে পাঁচ টাকা করে জমা দিয়ে গোসল করছেন আট থেকে ১০ জন।

পরিষ্কার পানিতে কেউ কেউ সাঁতার কাটছে। পানিতে খেলা করছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তবে পাড়ে ওয়াসার পানিতে কাপড় ধোয়ার পৃথক ব্যবস্থা আছে। পুকুরের মধ্যে ও চার পাড়ে কোথাও কোনো আবর্জনা নেই। একেবারে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। আবর্জনা ফেলার জন্য পাড়ের চারপাশে রয়েছে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন। আরও রয়েছে বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে নির্দেশাবলি। স্থানীয় বাসিন্দা খোকন সর্দার বলেন, এ পুকুরে ইসলামপুর, বাদামতলী, বাবুবাজার, শাঁখারীবাজার, পাটুয়াটুলী, তাঁতীবাজার ও নয়াবাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজন বেশি গোসল করেন। এর মধ্যে পুরান ঢাকার অনেক বাসিন্দা নিয়মিত গোসল করেন। মহানগরীর অভিজাত এলাকার অনেক যুবক-যুবতী ছুটির দিনে গোসল ও সাঁতার শিখতে ছুটে আসে। এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেতনভুক চারজন কর্মী রয়েছেন। বাদামতলীর ফলের আড়তের মালিক মনির হোসেন বলেন, বাদামতলীর ফলের আড়তের সামনেই বুড়িগঙ্গা নদী। কিন্তু নদীর পানি অনেক নোংরা। প্রায় সাত বছর ধরে এ পুকুরে গোসল করছেন তিনি। এখানে সাঁতার কেটে গোসল করতে   অনেক আনন্দ।

পুকুরপাড়ের বাসিন্দা খাজা নাজিম বলেন, এ পুকুরের নিচ থেকেই পানি ওঠে। সঙ্গে যোগ হয় বৃষ্টির পানি। পুকুরে পানি বেশি হলে সেচ দিয়ে কমিয়ে ফেলা হয়। এ পুকুরে মহল্লার কোনো নালা বা ওয়াসার পানির সংযোগ নেই। বিশেষ প্রয়োজনে ওয়াসা থেকে পানি দেওয়া হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর