শিরোনাম
শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নারীর প্রতি সহিংসতায় দায়ী পদ্ধতিগত ত্রুটি

-হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সহিংসতার শিকার নারীদের রক্ষা করতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী পদ্ধতিগত ত্রুটি। গতকাল হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

সহিংসতার পর বেঁচে যাওয়া নারী ও শিশুদের সাক্ষাৎকার এবং জরিপের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নারীর নিরাপত্তায় কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও জবাবদিহির অভাবে ভুক্তভোগীরা অনিরাপদ থাকেন। আরও বলা হয়, কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর শাটডাউন চলাকালে দেশে সহিংসতা বেড়েছে। জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন তার এক-চতুর্থাংশ প্রথমবারের মতো সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ‘আই স্লিপ অন মাই ওন ডেথ বেড : ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট ওমেন অ্যান্ড গার্লস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের ৬৫ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ৫০টি সাক্ষাৎকার রয়েছে। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে সরকারের প্রতিবন্ধকতার জায়গাগুলো এতে তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর সময় নারী ও মেয়েশিশুদের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি এবং যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক প্রতিবাদ বাংলাদেশ সরকারকে কাঠামোগত সংস্কারের জরুরি বার্তা দেয়। তিনি বলেন, সরকারের উচিত দেশজুড়ে সহজে সুবিধা নেওয়া যায় এমন আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা, আইনি সহায়তার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সহিংসতার খবর জানানো ও ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) একটি গবেষণার উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে অন্তত ২৩৫ জন নারীকে তাদের স্বামী বা তার পরিবারের সদস্যরা হত্যা করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়ে মাল্টি-সেক্টরাল প্রোগ্রামের তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী ও শিশুদের জন্য সরকারের নয়টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের একটির মাধ্যমে মামলা দায়েরকারী ১১ হাজার জনের মধ্যে মাত্র ১৬০ জন তাদের প্রতি সহিংসতার বিচার পেয়েছেন। এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নারী ও শিশুরা প্রায়ই এ আইনের অধীনে যথাযথ আইনি প্রতিকার পান না এবং নির্যাতনকারীদের খুব কমই শাস্তি দেওয়া হয়।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য সরকার পরিচালিত আনুমানিক ২১টি এবং এনজিও পরিচালিত ১৫টি আশ্রয় কেন্দ্র যথেষ্ট নয়।

প্রতিবেদনে অ্যাসিড সহিংসতা মোকাবিলায় সরকারের সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে। ২০০২ সালে অ্যাসিড হামলার অভিযোগ করা হয়েছিল ৫০০টি। নাটকীয়ভাবে যা কমে ২০২০ সালে মাত্র ২১টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কিছু আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার মামলায় ব্যর্থতার পেছনে পাবলিক প্রসিকিউটরদের অবহেলা দেখতে পান। রাজনৈতিক ভিত্তিতে পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ হওয়ায় তাদের জবাবদিহি খুবই কম। সহিংসতার পর বেঁচে যাওয়া নারী ও শিশু এবং মানবাধিকার কর্মীরা জানান, পাবলিক প্রসিকিউটররা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উভয় পক্ষের কাছ থেকে ঘুষ চান। যদি আসামি বেশি টাকা দিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে প্রসিকিউটররা আসামির কম সাজা প্রার্থনা করেন। নারী অধিকার আইনজীবীরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগী বা সাক্ষী নিরাপত্তা আইন নেই। এটি কার্যকরভাবে মামলা তদন্ত করতে মারাত্মক বাধা হিসেবে কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর