রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় নিয়ম মানে না কেউই

নো মাস্ক নো সার্ভিস, বাস্তবে কোনো কিছু নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনায় নিয়ম মানে না কেউই

‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বলা হলেও মাস্ক ছাড়াই রাস্তাঘাট, অফিস, শপিং মলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। চলছে জনসমাবেশ, বিয়ে, পিকনিক, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে নেই হ্যান্ডস্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি হলেও নিয়ম মানছে না কেউ। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ছে বেশিরভাগ মানুষ।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনা থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাড়ির বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক ছাড়া বের হলে সংক্রমিত করা এবং সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। গণপরিবহনে মাস্ক ছাড়া ওঠা যাবে না। মাস্ক থুতনিতে রেখে মুখে পরতে হবে। বাজার, ব্যাংক যেখানেই যান অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। কিছু খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে, নয়তো স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে শীতে সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। সামাজিক মেলামেশা না কমলে  হুট করেই যে কোনো সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে। গণপরিবহনের দরজা, জানালা বন্ধ থাকায় মুখ না ঢেকে হাঁচি দিলে জীবাণু ছড়িয়ে পড়বে স্বল্প পরিসরে। হঠাৎ করে কোথাও সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই অবেহলা নয় সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

গতকাল নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাস্ক ছাড়াই মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানুষ। ক্রেতা-বিক্রেতা কারও মুখেই নেই মাস্ক। নূরজাহান মার্কেটের নিচতলায় গাদাগাদি করে বিভিন্ন ধরনের পোশাক দেখছেন ক্রেতারা। ধাক্কাধাক্কি করে চলছে যাতায়াত। মাস্ক থুতনিতে রেখে কেনাকাটা করছিলেন ফয়জুল ইসলাম। করোনা ঝুঁকির বিষয়ে জানেন কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, মাস্ক তো পরেই আছি। কিন্তু সবসময় পরে থাকতে গরম লাগে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সারাক্ষণ পরে থাকাটা অসুবিধা। করোনার ভয় তো লাগে কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজারে এসেছি। এসে দেখি এ রকম ভিড়। আরেক ক্রেতা সায়েম হোসেনের মুখে কোনো মাস্ক নেই। মাস্ক না পরার কারণ জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, মাস্ক তো ব্যবহার করিই। কিন্তু সবসময় পরার কথা মনে থাকে না। মুখ থেকে অনেক সময় খুলে যায়। মাস্ক কেনা একটা বাড়তি খরচ। হকার্স মার্কেটের অবস্থাও একই। শাড়ি কিনতে দোকানে দোকানে ভিড়। কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজারে দেখা যায়, মাস্কের কোনো বালাই নেই। মাস্ক ছাড়াই বেচাকেনা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। গত বৃহস্পতিবার একটি সরকারি ব্যাংকের গুলশান-১ শাখায় গিয়ে দেখা যায়, বেতন তুলতে ভিড় করেছেন কর্মজীবীরা। ব্যাংকের প্রবেশ পথে হাতে স্যানিটাইজার দিচ্ছেন কর্মীরা। মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। কিন্তু ভিতরে ঢুকে অনেকে মাস্ক খুলে ফেলছেন। অনেকে মাস্ক টেবিলের ওপরে রেখে চেক লিখছেন। ক্যাশ কাউন্টারে কর্মীরা মাস্ক পরে লেনদেন করছেন। তবে যেসব টেবিলে ভিড় নেই সেখানে অনেক কর্মকর্তা মাস্ক খুলে রেখেছেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা আবশ্যক। অবহেলা করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। মাস্ক না পরে হাঁচি-কাশি দিলে জীবাণু কণা অর্থাৎ ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়বে। আর্দ্রতা কম থাকায় ড্রপলেট দ্রুত শুকিয়ে অ্যারোসল অর্থাৎ ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হবে। এসব জীবাণুমিশ্রিত ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ভাসমান থেকে সংক্রমণ বাড়াবে। এতে বাতাসের মাধ্যমে জীবাণুর সংক্রমণ বাড়বে। অন্য সময় দ্রুত মাটিতে ড্রপলেট পড়ে যেত কিন্তু শীতে তা হবে না। শীতে ধুলাও বেড়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর