মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ

অঢেল সম্পদ মেয়র প্রার্থীদের

অধিকাংশই ব্যবসায়ী, স্বশিক্ষিত থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারীও রয়েছেন

গোলাম রাব্বানী

আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের অনেকেরই রয়েছে অঢেল সম্পদ। নামে-বেনামেও সম্পদের পাহাড়। অনেকে নিজের নামের চেয়ে স্ত্রী-সন্তানের নামেই বেশি সম্পদ দেখিয়েছেন। এ ধাপের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী। শিক্ষাগত যোগ্যতায় ‘স্বশিক্ষিত’ ও ‘স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন’ থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রার্থীও রয়েছেন। মামলা বেশি বিএনপির প্রার্থীদের। আওয়ামী লীগের এক-দুজনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে মেয়র প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. তারিকুল ইসলাম। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাস। তিনি পেশায় শিক্ষক হলেও পাটের ব্যবসাও করেন। ব্যবসা ও কৃষি থেকে তার বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা দেখালেও তিনি চাকরি থেকে আয় দেখাননি। তবে তার ওপর নির্ভরশীলদের চাকরি থেকে আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার হাতে নগদ টাকা রয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্ত্রীর নামে জমা রয়েছে ১০ লাখ (পোস্ট অফিসে) এবং ২৬ লাখ (এফডি); এ খাতে নির্ভরশীলদের নামে রয়েছে ৭ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬ ভরি স্বর্ণ। নিজের নামে রয়েছে ডিপিএস। টিনশেড বাড়ি রয়েছে একটি; কৃষিজমি ৫৫.০৬ শতাংশ এবং অকৃষিজমি ৮ শতাংশ। সিসি ঋণ রয়েছে ২০ লাখ টাকার। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী রাজু আহম্মেদ। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। বর্তমানে তার নামে মামলা রয়েছে ৮টি। আগে ৬টি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকা। চাকরি থেকে স্ত্রীর আয় ২ লাখ ৪১ হাজার টাকা। নিজের কাছে নগদ টাকা রয়েছে ১০ হাজার ও স্ত্রীর কাছে ৫ হাজার। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে নিজের নামে ১ লাখ, স্ত্রীর নামে ৩০ হাজার। স্ত্রীর নামে স্বর্ণ রয়েছে ৭ ভরি। কৃষিজমি রয়েছে পৌনে ৫ শতাংশ; অকৃষি জমি সাড়ে ১৩ শতাংশ; যৌথ মালিকানায় রয়েছে একটি দোতলা বাড়ি। চট্টগ্রামের সীতাকু- পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী  বদিউল আলম। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। পেশায় ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৪ টাকা। তার কৃষি খাত আয় ৩ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ১০ হাজার ৪৩০ টাকা, মেয়র পদের সম্মানী ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ব্যাংক সুদ ৪১ হাজার ১৪ টাকা আয় রয়েছে। সম্পদের মধ্যে নগদ ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮০৩ টাকা, ব্যাংকে জমা ৪ লাখ ৭ হাজার ২৯৭ টাকা, বিভিন্ন মেয়াদে জমা ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৯০০ টাকা ও অলঙ্কার রয়েছে দেড় লাখ টাকা মূল্যমানের। ছেলের কাছ থেকে রেমিট্যান্স হিসেবে পেয়েছেন ৯ লাখ ৯২ হাজার ১৬১ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি ৮ গন্ডা, অকৃষি দুই গন্ডা, ১ হাজার ১২০ বর্গফুট আকারের দালান ও ২০০ বর্গফুটের সেমিপাকা বাড়ি আছে। ব্যাংক ঋণ রয়েছে ১৫ লাখ টাকার। এ পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল মুনছুর। তিনি নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ দাবি করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা বিচারাধীন। পেশায় ব্যবসায়ী ও দলিল লেখক। তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ রয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ২ লাখ টাকা মূল্যমানে অলঙ্কার। এ ছাড়া দুই তলা একটি বাড়ি রয়েছে। এ পৌরসভার অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জহিরুল ইসলাম। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ টাকা রয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার; স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা রয়েছে ১ লাখ। তার স্ত্রীর নামে স্বর্ণ রয়েছে ১০ তোলা।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মাসুদউজ্জামান মাসুক। তিনি নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ দাবি করেছেন। তার পেশা বাড়ি ভাড়া ও দোকান ভাড়ার ব্যবসা। তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার নগদ টাকা রয়েছে ৪৫ হাজার। কাউন্সিলর থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এ প্রার্থীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে ২০ শতক কৃষিজমি, ৮ শতক অকৃষিজমি ও ৪ শতক জমির ওপর এক তলা বিল্ডিং রয়েছে। ব্যাংক ঋণ রয়েছে ১০ লাখ টাকা।

এ পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী এম এফ আহমেদ অলি। তিনি নবম শ্রেণি পাস। পেশার বিবরণীতে তিনি লিখেছেন গৃহসম্পত্তি ও কৃষি আয়। কিন্তু তিনি এই পেশা থেকে কোনো বার্ষিক আয় দেখাননি। তার নামে মামলা রয়েছে ১০টি। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ২৮ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৮৫ টাকা। স্ত্রীর নামে জমা রয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার ৬২৬ টাকা। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে একটি পাকাঘর রয়েছে। যৌথ মালিকানায় ১৩ দশমিক ৯১ একর কৃষি, ১০৫ শতক অকৃষি ও ১৮০ শতক (৫০ লাখ) জমি আছে। এসব জমির ৪৮/৭ অংশের মালিক তিনি।

এ পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ছালেক মিয়া। তিনি নিজেকে স্বশিক্ষিত দাবি করেছেন। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তার নামে মামলা রয়েছে একটি। এই প্রার্থীর বার্ষিক আয় ৫২ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে কৃষি/মৎস্য খাতে আয় ৪০ লাখ ৫ হাজার টাকা, ভাড়া থেকে আয় ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ৩ লাখ ৩০ হাজার। এ ছাড়া (উপসত্ব, রয়্যালিটি) ও মেয়র হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা থেকে আয় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ টাকা রয়েছে ৩ লাখ, স্ত্রীর নামে ১ লাখ। ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ২৮ হাজার ৭১৬, স্ত্রীর নামে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৯২ টাকা। নিজের নামে ১০ ভরি ও স্ত্রীর নামে ৫০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। অকৃষিজমি ০.৩১৯৬ একর; বাড়ি রয়েছে ৩টি। জেলা পরিষদ থেকে লিজ নেওয়া তিনটি দোকান রয়েছে। ঋণ রয়েছে ৪৯ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭ টাকা। এ পৌরসভার অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবুল কাশেম। এসএসসি পাস তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নির্ভরশীলদের আয় ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ টাকা রয়েছে ২ লাখ। কৃষিজমি ১০১ শতাংশ, অকৃষিজমি ৭১.৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় কৃষিজমি ৪৯৪ শতাংশ, অকৃষিজমি ২৩৬.১ শতাংশ ও ৬টি বাড়ি রয়েছে। নিজের নামে ঋণ ৯ কোটি ৫০ লাখ ও স্ত্রীর নামে ঋণ ৩০ লাখ টাকা। এ পৌরসভার অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ফজল উদ্দিন তালুকদার। তিনি নিজেকে স্বশিক্ষিত দাবি করেছেন। অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ইমদাদুল ইসলাম। ¯œাতক পাস তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী।

ঢাকার ধামরাই পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম কবির। তিনি বিএ পাস। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান। আগে তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হলেও সেগুলোতে নিষ্পত্তি হয়েছে। তার বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সম্মানী ভাতা থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ টাকা রয়েছে ৩ লাখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৮ টাকা। স্ত্রীর নামে ২২ তোলা স্বর্ণ রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ২৫ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট বুকিং রয়েছে।

বিএনপির প্রার্থী দেওয়ান নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে চারটি বিচারাধীন ও একটি উচ্চ আদালত স্থগিত করেছে। তিনি বিএ পাস। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫২ টাকা। নগদ রয়েছে ১৭ হাজার ৩০০ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে দেড় লাখ টাকা। ২০ ভড়ি স্বর্ণ রয়েছে। অকৃষিজমি ১৬০ শতাংশ, ৩টি সেমিপাকা কারখানা, ১টি সেমিপাকা মার্কেট। এক তলা ভবন (২য় তলা নির্মাণাধীন)। ঋণ রয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এ পৌরসভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী শওকত আলী। তিনি এইচএসসি পাস। পেশায় তিনি শিক্ষক।

খুলনার চালনা পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। পেশায় ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্বর্ণ রয়েছে ১৫ তোলা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ৪ একর কৃষিজমি ও দশমিক ৫০ একর অকৃষিজমি রয়েছে। তার ৯ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। এ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন’। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একটি মামলা। তবে সেটি ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে স্থগিত। পেশায় ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ১১ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১ লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা ৫ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১১ একর কৃষিজমি, দশমিক ৮১ একর অকৃষিজমি, এক তলাবিশিষ্ট দালান ও বাড়ি একটি। ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা ঋণ আছে। এ পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মন্ডল। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি পাস, পিএইচডি ডিগ্রিও রয়েছে তার।  পেশায় তিনি শিক্ষক। এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী গৌতম কুমার রায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি পাস। পেশার বিবরণীতে তিনি লিখেছেন, কৃষিকাজ, গো-সেবা, ভক্তসেবা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর