শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ইলিশ মাছ নয়, নারীর লাশ

মির্জা মেহেদী তমাল

ইলিশ মাছ নয়, নারীর লাশ

সারা দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। হরতাল-অবরোধে সব বন্ধ। সন্ধ্যা নামতেই শহরগুলোয় ভুতুড়ে পরিবেশ। চোরাগোপ্তা বোমা হামলায় সেই পরিবেশ আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। বোমায় কাঁপছে দেশ। গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে যানবাহনে আগুন জ্বলছে। আতঙ্ক চারদিকে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চলছে তল্লাশি। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ফেনীর ছাগলনাইয়ার পুরনো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুভপুর সেতুর ওপরও চলছে ব্যাপক তল্লাশি। সব ধরনের যানবাহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেহ তল্লাশি করছে পুলিশ। যানবাহনের ভিতরেও চলছে তল্লাশি। এ সময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও পড়ে তল্লাশিতে। অটো থামার পর যাত্রীর দেহ তল্লাশি করা হয়। টর্চলাইট দিয়ে সিএনজিতে আলো ফেলে ভিতরে একটি কার্টন দেখতে পায় পুলিশ। ‘এর ভিতর কী?’ যাত্রীর কাছে জানতে চায় পুলিশ। ‘ভিতরে ইলিশ মাছ’- জবাব দেন সেই যাত্রী। পুলিশ এবার সার্চ করতে চায় সেই কার্টনটি। কার্টনটি ভীষণ ভারী। তুলতে গিয়ে পুলিশ বুঝতে পারে। ধরাধরি করে অটো থেকে কার্টনটি নিচে নামায়। স্কচটেপ দিয়ে লাগানো ককসিটের তৈরি কার্টনটি খোলার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে স্কচটেপ টেনে খুলতে থাকে পুলিশ। এরপর কার্টনের মুখ খোলে। সেদিকে তাকিয়েই পুলিশ থমকে যায়। হতবাক। লাশ লাশ বলে চিৎকার করে ওঠে পুলিশের একজন। এ সময় ওই যাত্রীকে ঘিরে ধরে। জাপটে ধরে ফেলে তাকে। পুলিশ কার্টন থেকে এক নারীর লাশের দুটি  খন্ডিত অংশ উদ্ধার করে। ২০১২ সালের এপ্রিলে সাইফুল ইসলাম তার স্ত্রী ফারহানাকে হত্যার পর চার টুকরা করেন। কিন্তু টুকরাগুলোর ওজন এত বেশি যে, একা এগুলো বহন করা সম্ভব ছিল না। যে কারণে দুই টুকরা কার্টনে ভরে চট্টগ্রামের বাসা থেকে বেরিয়ে যান সাইফুল। কিন্তু ধরা পড়েন পুলিশের কাছে। সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রামে শিপইয়ার্ডে কাজ করতেন। কার্টনভর্তি লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ সাইফুল ইসলামকে জেরা করতে শুরু করে। তিনি হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা করেন। সাইফুল জানান, খুনের ঘটনার চার বছর আগে ফারহানার সঙ্গে তার পরিচয়। পরিচয়ের এক বছর পর পরিবারের অমতে বিয়ে করেন ফারজানাকে। চট্টগ্রাম বন্দর থানার নিউমুরিং আবাসিক এলাকায় একটি দোতলা বাড়িতে স্ত্রী ফারজানা ইয়াসমিনকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন সাইফুল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিয়ের দুই বছর পর তাদের মধ্যে দূরত্ব শুরু হতে থাকে। পরিবারের চাপে সাইফুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন এক কলেজছাত্রীকে। এ নিয়ে ফারজানার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ প্রকট হয়। এর জের ধরে ২২ এপ্রিল রাতে দুজনের মধ্যে প্রচ- ঝগড়া হয়। এরপর ফারজানা ঘুমিয়ে পড়লে ঘুমন্ত স্ত্রীকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন সাইফুল। পরদিন ছিল শনিবার। সারা দিন স্ত্রীর লাশ কী করবেন, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন সাইফুল। পরে লাশটিকে মাটিচাপা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু গোটা লাশ বহন করা কষ্টকর হবে চিন্তা করে লাশটিকে ছুরি দিয়ে চার টুকরা করেন। এরপর দুই টুকরো বাসার রেফ্রিজারেটরে (ফ্রিজ) ভরে রাখেন। বাকি দুই টুকরো মাছ বহনের কার্টনে ভরে বরফ দিয়ে গ্রামের বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ বল্লভপুরের দিকে রওনা হন। চট্টগ্রাম  থেকে বাসে করে মাছের দুটি কার্টন নিয়ে তিনি মিরসরাইয়ের বারইয়ার হাট পৌঁছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর