বুধবার, ১৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বিলাসী নয়, করোনা বাস্তবতা বিবেচনাই মুখ্য

আকতার কবির

বিলাসী নয়, করোনা বাস্তবতা বিবেচনাই মুখ্য

‘বিলাসী বাজেট নয়, করোনা বাস্তবতায় কর্মসংস্থানমুখী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান খাতে গুরুত্ব দিতে হবে’-বললেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির। কেমন বাজেট চাই- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কেননা করোনার কারণে সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। করোনার কারণে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন।

প্রবাসী শ্রমিকরা অনেকেই দেশে ফিরে এসেছেন। বছরে যেখানে ৬ থেকে ১০ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের কর্মসংস্থান ঘটে, সেখানে গেল বছরে মাত্র আড়াই লাখ শ্রমিক প্রবাসে কর্মসংস্থান পেয়েছেন। ফিরে এসেছেন অনেক শ্রমিক। এদের জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে শ্রমনির্ভর উদ্যোগে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।

অ্যাডভোকেট আকতার কবির বলেন, ‘শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নিচে। নেপালের চেয়েও বাংলাদেশের এ বরাদ্দ কম। বাংলাদেশের জিডিপির ২.০১ শতাংশ শিক্ষা খাতে বাজেট রয়েছে। অথচ নেপালে তা ৩.৫০ শতাংশ।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের নামে ১ টাকার জিনিস ৫০০ টাকায় কেনার যে লোপাট প্রক্রিয়া, তা বন্ধ করে শিক্ষা খাতে ভর্তুকি দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে প্রযুক্তিসামগ্রী, শিক্ষা সহায়ক সরঞ্জাম প্রদান করতে হবে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের পেটে এখন ভাত নেই। দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি স্কুলের। করোনার কারণে তাদের শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত। তাদের প্রযুক্তির সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে হবে, যাতে শিক্ষা প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত না হয়। করোনার কারণে বেড়েছে শিক্ষায় অনলাইনে নির্ভরতা। অথচ ইন্টারনেটের চার্জ বেড়েছে। সাধারণত কোনো পণ্যের চাহিদা বাড়লে কম লাভেও তা বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করা যায়। কিন্তু এখন অনলাইনের ক্ষেত্রে হচ্ছে তার বিপরীত। মানুষ যতই প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে, ততই কেন ইন্টারনেটের দাম বাড়বে?’

প্রসঙ্গক্রমে গতবারের বাজেটের উদাহরণ টেনে আকতার কবির বলেন, গত বছর মোবাইলের দাম বাড়ার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হু হু করে বেড়ে গেল এ-সংক্রান্ত সামগ্রীর দাম।

শিক্ষা প্রণোদনার ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা ফ্যামিলি প্লানিংয়ের টাকাটা তারা অনুমতি নিয়ে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করে শতভাগ শিক্ষিত জাতি হিসেবে নিজেদের রূপান্তর করেছে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মানবজাতির জন্য এখন বড় সংকট। এই বাস্তবতায় জিডিপি ও মেগা প্রজেক্ট নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সরকারের উচিত কর্মমুখী প্রণোদনামূলক বাজেট দেওয়া। প্রয়োজনে মেগা প্রজেক্টগুলো দু-চার বছর স্থগিত রাখা যেতে পারে। স্বাস্থ্য খাতে সংকট নিরসনে গত এক বছরের যে লেজে-গোবরে অবস্থা, তা অতিক্রম করতে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। জিডিপি ও মেগা প্রজেক্টের চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো এখন মুখ্য। এই করোনাকালেও আমাদের প্রধান সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে কৃষি। কাজেই কৃষি খাতের সব কৃত্রিম সংকট নিরসন করে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।

সর্বশেষ খবর