বুধবার, ২৬ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

দক্ষিণখানে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে খণ্ডিত লাশ, ইমাম গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর দক্ষিণখানে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে যুবকের ছয় খন্ড গলিত লাশ উদ্ধার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই মসজিদের ইমাম মো. আবদুর রহমানকে। নিহত যুবকের নাম আজহারুল ইসলাম। তিনি গত ১৯ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল বিকালে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবদুল মোত্তাকিম।

তিনি জানান, সোমবার রাত ৯টার দিকে র‌্যাব জানতে পারে দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এলাকাবাসীর কাছে জানতে পারে, গত ১৯ মে থেকে আজহার নামে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ আজহারকে খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। পরে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং গোপন সূত্রের ভিত্তিতে হত্যাকারী চিহ্নিত করা হয়। র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক আরও জানান, গার্মেন্টকর্মী আজাহারকে খুনের ঘটনায় মাওলানা মো. আবদুর রহমানকে দক্ষিণখান থানার মাদরাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আসামির কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি চাকু ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। আসামির দেওয়া তথ্য মতে গতকাল দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে নিহত আজহারের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, মাওলানা মো. আবদুর রহমান সরদারবাড়ি জামে মসজিদে ৩৩ বছর ইমামতি করে আসছেন। নিহত আজহারের চার বছরের ছেলে মো. আরিয়ান ওই মসজিদের মক্তবে পড়াশোনা করত। নিহত আজহার নিজেও তার কাছে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করতেন। গত ১৯ মে আসামি মাওলানা মো. আবদুর রহমানের সঙ্গে নিহত আজহারের কোনো একটা বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে আজহারের গলার ডানপাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে। পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশে আজহারের লাশ টুকরা টুকরা করে সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে জানান র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবদুল মোত্তাকিম। জানা গেছে, নিহত আজহারের স্ত্রীর সঙ্গে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. আবদুর রহমানের সখ্য গড়ে ওঠে। এর প্রতিবাদ করতে মসজিদে গেলে আজহারকে পশু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে নিজ কক্ষে খুন করেন আবদুর রহমান।

নৃশংস হত্যাকান্ডের পেছনে নিহতের স্ত্রী আসমা বেগম জড়িত কিনা, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাকেও নেওয়া হয়েছে র‌্যাব হেফাজতে। র‌্যাব কর্মকর্তা লে. কর্নেল মোত্তাকিম জানান, এই ঘটনার পেছনে পরকীয়ার সম্পর্ক আছে কি-না যাচাই-বাছাই করছি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমরা আজহারের স্ত্রীকে হেফাজতে নিয়েছি। ঘটনার একদিন আগে স্ত্রী আসমা তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে চলে যায়। তিনি ঘটনার আগের দিন থেকে টাঙ্গাইলেই ছিলেন কি-না এবং হত্যায় তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডিএমপির দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুল হক মিয়া জানান, আজহার নিখোঁজের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি। যেহেতু তার লাশ উদ্ধার হয়েছে, সেক্ষেত্রে এ ঘটনায় হত্যা মামলা হবে।

সর্বশেষ খবর