শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজধানীতে বায়িং হাউসের আড়ালে মাদক আইসের আস্তানা

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার ৬, বিপুল পরিমাণ আইস, অস্ত্র, টর্চার যন্ত্র উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় ভয়ংকর অপরাধীদের আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। টেকনাফ থেকে ভয়ংকর মাদক ‘আইস’ এনে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করত একটি চক্র। সেই সঙ্গে বায়িং হাউসের নামে বাসাভাড়া নিয়ে চলত মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম। মাদক সেবনের পর উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে করা হতো ব্ল্যাকমেল, অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করা হতো অর্থ। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত এক অভিযানে র‌্যাব ভয়ংকর এ চক্রটির ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদক আইস, ইয়াবা, বিদেশি মদ, গাঁজা ও ১৩টি বিদেশি অস্ত্র, এয়ার গান, রেপ্লিকা অস্ত্র, ইলেকট্রিক শক দেওয়ার টর্চার যন্ত্র, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদিসহ ল্যাবরেটরির বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য দিয়ে বলেন, গ্রেফতার ছয়জনই ভয়ংকর সিন্ডিকেটের সদস্য। মাদক ব্যবসা ছাড়াও নানা অপরাধে এরা জড়িত। তবে এরা বেশির ভাগই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-              তৌফিক হোসাইন, জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন, আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র, রাকিব বাশার খান, খালেদ ইকবাল ও সাইফুল ইসলাম ওরফে সবুজ।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের সদস্য। ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে রাজধানীতে মাদক সরবরাহ করতেন তারা। এরা টেকনাফ থেকে মাদক এনে উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীদের কাছে বিক্রি করতেন। এ ছাড়া রাজধানীর মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা থেকে আইস সংগ্রহ করে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতেন তারা। রাজধানীর উত্তরায় অভিযান পরিচালনার পর আরও জানা যায়, একটি বায়িং হাউজের আড়ালে চলছিল আইস কেনাবেচা এবং সেবন। শুধু মাদক বিক্রি নয়, বিক্রির পর সেবনের স্থানের ব্যবস্থা করত এ চক্রটি। যেসব তরুণ-তরুণী তাদের ব্যবস্থাপনায় এসব জায়গায় মাদক সেবন করতে আসতেন, তাদের বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেল করা হতো বলেও জানতে পেরেছে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব কমান্ডার বলেন, তরুণ-তরুণীদের আইস এবং ইয়াবা সেবন করিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করত এ চক্রটি। সিন্ডিকেটের বাইরে আইস সরবরাহ করা হতো না বলেই ক্লায়েন্টদের প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখতেন তারা।

র‌্যাব জানায়, এ চক্রের আইস মাদক ব্যবসার অর্থ জোগানদাতা ছিলেন গ্রেফতার জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন। আর গ্রেফতারকৃত তৌফিক মূলত সমন্বয়কের কাজ করতেন। রুদ্র ল্যাবের কেমিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। সবুজ আইস সংগ্রহ ও সরবরাহের কাজ করতেন। এ ছাড়া মাদক বিপণন ও বহন করার ক্ষেত্রে রাকিব ও খালিদকে ব্যবহার করা হতো। রাজধানীতে আরও ৫০ জনের মতো আইসসেবী রয়েছেন। এ চক্রটি প্রতিনিয়ত তাদের কাছে আইস পৌঁছে দিত। গত দুই বছর তারা এ আইস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর আগে ১০ বছর ধরে তারা ইয়াবার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

উদ্ধার হওয়া এয়ারগান প্রসঙ্গে র‌্যাব জানায়, মাদকদ্রব্য সেবনের জন্য তারা উত্তরায় একটি বায়িং হাউজের নামে বাসাভাড়া করে গোপনে মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সেখানে আইস সেবনের পর তরুণ-তরুণীদের নিয়ে তারা এইমিং গেমস খেলতেন। আর এ এয়ারগান দিয়ে চলত গেমসটি। তবে উদ্ধার এয়ার গানগুলোর বৈধ কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি, যদিও এয়ারগান ব্যবহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জুবেইন লন্ডন থেকে বিবিএ, তৌফিক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, খালেদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ, রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাস করার পর ড্রপআউট, খালেদ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রাথমিকভাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তবে গ্রেফতারকৃত রুদ্রের নামে তিনটি মাদক মামলা এবং জুবেইনের নামে একটি হত্যা মামলা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর