শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউনে সাত দিনের খাবার পাইছি ঘর থেকে বের হব না

বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

লকডাউনে সাত দিনের খাবার পাইছি ঘর থেকে বের হব না

তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের একটি গ্রামে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করেন মজিরুল ইসলাম। তিনি একজন মাইকিং শিল্পী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রচার করেন মাইকিংয়ের মাধ্যমে। এ পেশাতেই তার সংসার চলে। পরিবারে উপার্জনের ব্যক্তি তিনিই। করোনায় সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ। কঠোর লকডাউনে অন্য কোনো কাজও নেই। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। ঠিক এই সময় বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন মজিরুল। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের সময় ত্রাণ পাব আশা করিনি। এখন সাত দিন আমি নিশ্চিন্ত। ঘর থেকে বের হব না।’ এমন অনুভূতি পঞ্চগড়ের হাজারো মানুষের।

কঠোর লকডাউনে পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে কর্মহীন মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ। করোনার দুঃসময়ে ত্রাণ, খাদ্যসামগ্রী পেয়ে খুশি প্রান্তিক দরিদ্র মানুষ। সাত দিনের খাবার পেয়ে নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরছেন তারা।

গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার আটোয়ারী এবং সবশেষ উপজেলা তেঁতুলিয়ায় এ ত্রাণ বিতরণ করা হয়। কঠোর লকডাউনের মধ্যে কর্মহীন মানুষ ত্রাণ পেয়ে খুশি। এ জেলায় ৩ হাজার দরিদ্র পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে। জানা গেছে, করোনার কঠোর লকডাউনে পঞ্চগড়ের হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ খাবারের সংকটে পড়েছে। এসব বিবেচনা করে বসুন্ধরা গ্রুপ এ জেলার প্রান্তিক মানুষের হাতে খাবার তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। বৃহস্পতিবার আটোয়ারীর ধামোর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও বি এম কলেজ মাঠে ৫০০ দুস্থ এবং দরিদ্র মানুষের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়। এ সময় জেলা পরিষদ সদস্য মাসুদ করিম ও ধামোর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম দুলাল উপস্থিত ছিলেন। গতকাল সকালে তেঁতুলিয়া উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রায় ৩০০ দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়। দৈনিক কালের কণ্ঠের সহসম্পাদক আতাউর রহমান কাবুলের সঞ্চালনায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগচন্দ্র সাহা, উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মাসুদুল হক, তেঁতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সায়েম মিঞা, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহসভাপতি ও বাংলাবান্ধা আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি আবদুল লতিব তারিন এবং কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান। এ সময় ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল ও ২ কেজি আটা তুলে দেওয়া হয়। পরে খয়খাটপাড়া নুরানিয়া হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়। বিকালে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের নাওয়াপাড়া হাইস্কুল মাঠে শতাধিক কর্মহীন মানুষের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়। তেঁতুলিয়া উপজেলায় সহস্রাধিক দরিদ্র মানুষের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়। ত্রাণ পেয়ে খুশি তারা। তারা বলছেন করোনা সংকটের দিনে ত্রাণ পেয়ে অনেক উপকার হলো। ত্রাণ পাওয়া এসব মানুষের মধ্যে অনেকে শ্রমিক, কৃষক, ভিক্ষুক, হোটেলশ্রমিক, অটোচালক, পাথরশ্রমিক রয়েছেন।

এদিকে বসুন্ধরা গ্রুপের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পঞ্চগড়ের বিশিষ্টজনেরা। তারা দেশের এই দুঃসময়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পাশাপাশি অন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর