সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

তিস্তা ও পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে কমেছে যমুনায়

প্রতিদিন ডেস্ক

তিস্তা ও পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে কমেছে যমুনায়

সিরাজগঞ্জে বাঁধ কেটে দেওয়ায় আট উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা, ধরলা এবং পদ্মা নদীর পানি বাড়তে থাকলেও গতকাল কিছুটা কমেছে যমুনা ও দুধকুমারের পানি। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। অনেক জায়গায় ব্যাপক ভাঙনের ঘটনাও ঘটছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

লালমনিরহাট : ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ধীরে ধীরে তিস্তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। ধরলার পানিও প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে তিস্তা-ধরলার ৬৩ চর প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গতকাল বিকালে দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার  নিচ (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরই মধ্যে ব্যারাজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, দুপুর ২টায় ৫২ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার স্পর্শ করে। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তিস্তার পানি।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে ও উজানের ঢলে সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি অনেক কমেছে কিন্তু ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি একটু বাড়লেও সব কটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেকটা নিচ দিয়ে বইছে। নদী তীরবর্তী দ্বীপ ও দ্বীপচরে পানি উঠেছে। শুরু হয়েছে এসব এলাকায় নদীভাঙন। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সদর উপজেলা ও রৌমারী, রাজিবপুর ও উলিপুর উপজেলাসহ নদ-নদীর ২১টি পয়েন্টে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। যদিও ওয়াপদা বালির বস্তা ও টিউব ব্যাগ ফেলে তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

রংপুর : উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফরে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার চরাঞ্চলসহ তীরবর্তী এলাকার প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শনিবার রাত থেকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, চর মটুকপুর, বিনবিনা এলাকার ১ হাজার ৩০০ ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, চর ইচলী, এলাকায় ১ হাজার এবং মর্নেয়া  ইউনিয়নে ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় বিনবিনা এলাকায় কিছু লোক গবাদিপশু, বাড়ির আসবাবপত্রসহ রাস্তায় কিংবা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, তার ইউনিয়নের চিলাখাল, উত্তর চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনা মাঝের চর, সাউদপাড়া ও বাবুরটারী বাঁধের পাড় ও বিনবিনা এলাকায় ১ হাজার ৩০০ পরিবার এখন পানিবন্দী। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী জানান, তার ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

রাজশাহী : রাজশাহী বাড়তে শুরু করেছে পদ্মার পানি। মে মাসে পানি বাড়ছিল। জুন মাসজুড়ে পানি স্থিতাবস্থায় ছিল। তবে গত শুক্রবার থেকে পানি আবার বাড়ছে। রাজশাহীতে শুক্রবার ১৪.৭৪ মিটার, শনিবার ১৪.৬৭ ও গতকাল পানির স্তর ছিল ১৪.৭০ মিটার। রাজশাহীতে বিপৎসীমা ১৮.৫০ মিটার। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান মিটার গেজ এনামুল হক জানান, উজানে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় এখন পানি বাড়ছে। এটি এ সময় স্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। গত ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি বেড়েছে ৩ সেন্টিমিটার।

নেত্রকোনা : ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে গতকাল দিনব্যাপী বৃষ্টি না হওয়ায় সোমেশ্বরী নদীর পানি কিছুটা কমেছে। এদিকে টানা কয়েক দিনের ঢলে বিভিন্ন উপজেলার নদীতীরবর্তী কিছু এলাকায় পানিবন্দী রয়েছেন মানুষ।

সিরাজগঞ্জ : এক সপ্তাহ যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির পর গতকাল থেকে ফের কমতে শুরু করেছে। ২৪ ঘণ্টায় ৪ সে.মি কমে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১২.৮ সেন্টিমিটারে রয়েছে। যা এখনো বিপৎসীমার ১ দশমিক ২৭ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ফসল রক্ষার জন্য পাউবোর ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতারা স্লুইস গেট-সংলগ্ন অস্থায়ী রিং বাঁধটি শনিবার ভোররাতে মৎস্য শিকারি ও নৌযান শ্রমিকরা কেটে দিয়েছেন। এর ফলে চলনবিল অধ্যুষিত উল্লাপাড়া, পাবনা জেলার চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, সিংড়া ও বড়াইগ্রাম উপজেলা ও শাহজাদপুরের ৪৫ হাজার হেক্টর জমি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এর ফলে কৃষকের লাগানো নেপিয়ার, গামা ঘাস, বোনা আমন ও সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর