সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
রিমান্ডে যৌন নির্যাতন

তদন্তে কমিটি গঠন শেবাচিমের প্রতিবেদন আদালতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালের উজিরপুর থানায় এক নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেঞ্জ ডিআইজি মো. আক্তারুজ্জামান গতকাল এই কমিটি গঠন করে পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ওই আসামির শারীরিক পরীক্ষা শেষে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন। এদিকে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার জোট বরিশালের যুগ্ম সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম।

উজিরপুর থানায় দুই দিন রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই যখন ওই নারী আসামিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলি আদালতে হাজির করা হয় তখন খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন তিনি। তাৎক্ষণিক আদালত একজন নারী কনস্টেবল দিয়ে একটি কক্ষে নিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের  প্রাথমিক প্রমাণ পান। আদালত তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি তার শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালককে। আদালত নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ওই নারীকে সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারকে। কিন্তু নারী আসামি নির্যাতনকারীর নাম উল্লেখ করেননি। এ কারণে নির্যাতনকারী শনাক্তে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গতকাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. আক্তারুজ্জামান দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার কাজী মো. সোয়াইব এবং বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশালের অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম এহসান উল্লাহ বলেন, নারী আসামিকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদালতের নির্দেশে গত শনিবারই নারী আসামির শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক। প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তবে হাসপাতালের পরিচালক কার্যালয় থেকে আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে রিমান্ডে থাকা নারী আসামির দুই কনুই, দুই পায়ের গোড়ালি, ডান পায়ের পেছনে এবং তার উভয় নিতম্বে ভোঁতা বস্তুর আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ রয়েছে। গত ১ জুলাই তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। শেরেবাংলা মেডিকেলের গাইনি বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মহসেনা আক্তার এই ইনজুরি প্রতিবেদন তৈরি করেন।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বরিশাল মানবাধিকার জোটের যুগ্ম সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, রিমান্ডে নারী আসামিকে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হলে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এতে পুলিশের মধ্যে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমবে বলে জানান এই মানবাধিকার নেতা। বর্তমানে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন ওই নারী আসামি। গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুরের জামবাড়ি এলাকায় এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি তিনি। এই মামলার আসামি হিসেবে ওইদিনই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হত্যার ক্লু উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া নিয়েছিল উজিরপুর থানা পুলিশ।

সর্বশেষ খবর