মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

সড়কে বেড়েছে মানুষ গাড়ি চলাচল

মোড়ে মোড়ে চেকপোস্টেও কমছে না, কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়কে বেড়েছে মানুষ গাড়ি চলাচল

রাজধানীর অলিগলিতে বিধিনিষেধ মানছে না মানুষ। ছবিটি বনগ্রাম রোড ওয়ারী থেকে তোলা -রোহেত রাজীব

কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিন ছিল গতকাল। কঠোর অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবুও গত তিন দিনের তুলনায় যেমন বেড়েছে মানুষের চলাচল, তেমনই বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। চেকপোস্টে রিকশা-যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় কোথাও কোথাও কিছুটা যানজটেরও সৃষ্টি হয়। গতকাল অনেক এলাকায় প্রধান সড়কে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বেশি ছিল। অলিগলিতে কিছু দোকানপাটও খোলা ছিল। পুলিশের তল্লাশি চৌকির পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের সড়কে টহল দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া অপ্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন তাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়। গাড়ির নামে মামলা হয়েছে, গুনতে হয়েছে জরিমানা।

বিধিনিষেধের চতুর্থ দিনে গতকাল রাজধানীতে ৫৬৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিনা প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হওয়ার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া ৪৪৩টি গাড়িকে ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অকারণে ঘর থেকে বের হওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৬৪ জনকে ১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেছে। পাশাপাশি ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী বিধি লঙ্ঘন করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৪৩টি গাড়িকে ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা জরিমানা করে। আর র?্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশে র?্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ২৬৪ জনকে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে ১ থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে তা ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ঈদুল আজহার কারণে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এরপর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোরতম বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, সাত মসজিদ রোড এলাকার প্রধান সড়কে সোমবার রিকশা চলাচল বেড়েছে। অলিগলিতে কিছু দোকানপাটও খোলা ছিল। তল্লাশি চৌকিগুলোতে পথচারী ও গাড়িচালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। সেসব জায়গায় যানবাহনের কিছুটা জটলা তৈরি হয়। ফকিরাপুল, পল্টন, শাহজাহানপুর, বিজয়নগর সড়ক ঘুরে দেখা গেল লকডাউনের চতুর্থ দিনে রাস্তায় রিকশা ও ভ্যানের পাশাপাশি চলছে প্রাইভেট কার, মোটরবাইক ও সরকারি যানবাহন। সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। কাকরাইলের কাছে পুলিশের চেকপোস্টের সামনে কড়াকড়ি বেশি। গাড়ি ও রিকশার যাত্রীদের থামিয়ে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, কেন তারা বের হয়েছেন। সঠিক জবাব না পেলে রিকশা থেকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, প্রাইভেট কার চালকদের করা হয় জরিমানা। শান্তিনগরের কাছে চেকপোস্টেও একই দৃশ্য।

অন্যদিকে রাজধানীর অনেক বেসরকারি অফিস খোলা থাকায় বাধ্য হয়ে বের হয়েছেন কর্মীরা। রিকশা, ভ্যান কিংবা ব্যক্তিগত প্রাইভেট গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন তারা। অনেকে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ভোগান্তি নিয়ে যাচ্ছেন কর্মস্থলে। গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শাহবাগ, বাংলামোটর, পান্থপথ, কাওরান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ, গুলশান, বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড, মতিঝিল, গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব সড়কেই আগের তিন দিনের তুলনায় ব্যক্তিগত যানবাহন, রিকশা ও মানুষের চলাচল বেড়েছে।

সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, রাসেল স্কয়ার এলাকা ঘুরে তল্লাশি চৌকিগুলোতে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। গত তিন দিনের তুলনায় এসব তল্লাশি চৌকিতে গাড়ির জটলা বেশি ছিল। ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেলের সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো। এসবের বেশিরভাগই ছিল বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কর্মীদের।

গত তিন দিনের তুলনায় রিকশা ভাড়া কিছুটা কমলেও এখনো অন্তত দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকছেন চালকরা। মিরপুর মোড় থেকে ঝিগাতলায় আসেন আশিক মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক সময় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় যাওয়া গেলেও এখন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। রাস্তায় রিকশা থাকলেও সবাই অতিরিক্ত ভাড়া চায়।’

এদিকে বেশকিছু আবাসিক এলাকা ও অলিগলি ঘুরে দেখা যায়, মাস্ক ব্যবহার না করেই অপ্রয়োজনে অধিকাংশ মানুষ চলাফেরা করছেন। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়েনি। এসব এলাকার অলিগলিতে প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানই খোলা রাখা হয়েছে। রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই বিধিনিষেধ মানতে এমন অনীহা দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনসমাগম। আর সন্ধ্যা থেকে পাড়া মহল্লায় দূরত্ব না মেনে চলে অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর