কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় জহির রিমন। তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিলেও রিমনের সন্ধান পাওয়া যায় না। তার বড় ভাই এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। রিমন নিখোঁজ হয় ৭ মার্চ। নিখোঁজের ১৬ দিন পর রিমনের পরিবার জানতে পারে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে অজ্ঞাত একটি লাশ পড়ে আছে। সাভারের ভাকুর্তা এলাকার শৈলমাছি ঘাট থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। নিখোঁজের এক দিন পর ৮ মার্চ লাশটি উদ্ধার হওয়ায় পরিবারের ধারণা লাশটি রিমনের হতে পারে। তারা শুনেই ছুটে যায়। ফুলে গেলেও তারা দেখে চিনতে পারে লাশটি রিমনের। ১৬ দিন পর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ প্রথমেই রিমনের মোবাইল ফোনের অবস্থান জানার চেষ্টা করে। পুলিশ দেখে ফোনের অবস্থান রাজধানীর বাড্ডায়। পুলিশ বাড্ডায় অভিযান চালায়। রিমনের ফোনসহ গ্রেফতার করে শুভ নামের এক যুবককে। তাকে থানায় নিয়ে জেরা শুরু করে।
বল, এই মোবাইল ফোন তুই কোথা থেকে পেলি? কে দিয়েছে তোকে এ ফোন? পুলিশের এমন প্রশ্নে মুখ খোলে না যুবকটি। হ্যান্ডকাফ পরা যুবকটি হাজতের মেঝের ওপর বসে আছে। মাথা নিচু করে। পুলিশের কোনো কথাই তার কানে যেন ঢুকছিল না। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে তাকে জেরা করছে পুলিশ। কিন্তু কোনোভাবেই তার মুখ খোলানো যাচ্ছে না। পুলিশ কর্মকর্তাটি এবার ভিন্ন পথে এগোয়। বলে, বুঝেছি সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না। একটি মোটা লাঠি নিয়ে যুবকটির সামনে এসে দাঁড়ায়। লাঠি দিয়ে কষে এক বাড়ি দিতেই চিৎকার করতে থাকে যুবকটি। বলতে থাকে, স্যার মাইরেন না, কইতাছি। পুলিশ একটু আশ্বস্ত হয়। বলে, সব সত্যি কথা বলে ফেল। তাহলে মাইর থেকে অন্তত তোকে রক্ষা করা যাবে।
যুবকটি বলে, স্যার, এইটা আমার বউ মিম দিছে। এ কথা বলেই যুবকটি আবারও চুপ। পুলিশ এতে বিরক্ত হয়ে বলে, ওই, তোরে নাটক বলতে বলিনি। পুরো ঘটনা বল। তোর বউ এটা পেল কোথায়? যুবকটি বলে, জহির রিমন নামে পরিচিত একজন টাকা ধার নিয়েছিল বউয়ের কাছ থেকে। কিন্তু টাকা ফেরত দিচ্ছিল না রিমন। তাই তার সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই মিম তার মোবাইল ফোনটি রেখে দেয়। টাকা দিয়ে ফেরত নিয়ে যাবে বলেছিল। এরপর থেকে আর রিমনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তার।
পুলিশ নিশ্চিত শুভ মিথ্যা বলছে। তাকে আরও জেরা করে। একপর্যায়ে শুভ জানায়, রিমনের সঙ্গে তার স্ত্রী মিমের একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু সে এটা সহ্য করতে পারেনি। তাই খুন করেছে রিমনকে। শুভ পুলিশকে জানায়, ৭ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় রিমনকে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরকিশায় করে শুভ যায় কেরানীগঞ্জের আটিবাজারে। সেখানে তারা পৌঁছায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে। নিরিবিলি পরিবেশে গল্প করতে নদীর পাড়ে গিয়ে বসে রিমন আর শুভ। গল্পের একপর্যায়ে শুভ জানতে চায় রিমনের কাছে তার স্ত্রী মিমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কথা। কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে ছিল রিমন। একপর্যায়ে সে স্বীকার করে। শুভর কাছে ক্ষমা চায়। আর কখনো এমন হবে না বলেও কথা দেয়। মাথা নিচু করে থাকে রিমন। এ সুযোগে পেছন থেকে হাতুড়ি বের করে শুভ। রিমনের মাথায় এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। লুটিয়ে পড়ে রিমন। এরপরও থামেনি। হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতেই থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার দেহে প্রাণ ছিল। পরে মরদেহ ভাসিয়ে দেয় বুড়িগঙ্গায়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার এক দিন পর লাশটি ভাসতে ভাসতে চলে যায় সাভারের ভাকুর্তা এলাকার শৈলমাছি ঘাট এলাকায়। সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। ডিএমপির লালবাগ বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, পরকীয়ার জেরেই এ হত্যাকান্ড। শুভ তার ক্ষোভ ও আক্রোশ থেকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। অনেক সময় নিয়ে তাকে (রিমন) পেটানোর পর যখন দেখেছে আর নড়ছে না তখন পানিতে ফেলে দেয় সে। রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১টার দিকে এটি হতে পারে। রিমন হত্যাকান্ডের বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।