বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিত খুন

মির্জা মেহেদী তমাল

আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিত খুন

গাইবান্ধার বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারাপুর গ্রাম। কাকডাকা ভোরেই গ্রামের মানুষের দিন শুরু হয়। গ্রামের লোকজন বেরিয়ে যায় খেত-খামারের কাজে। সেদিনও গ্রামের দিন শুরু হয়েছিল প্রতিদিনের মতোই। কিন্তু ঘাটালের ভিটায় কাজ করতে যাওয়া কয়েকজন কৃষকের চোখে পড়ে দুটি লাশ। গাছের সঙ্গে এক রশিতে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলে আছে দুটি দেহ। বেশ উঁচুতে ঝুলে থাকার কারণে প্রথম দেখায়ই তারা চিনতে পারেনি লাশ দুটি। তাদের হাঁকডাকে গ্রামের লোকজন ছুটে আসে। আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ সেখানে ভিড় করে। অন্যদের মতো সেখানে ছুটে আসেন বাদিয়াখালি ইউনিয়নের পাঠানডাঙ্গা মাঝিপাড়া গ্রামের রামচন্দ্র দাস। রামচন্দ্র দাস নিচ থেকে দেখেই চিনতে পারেন নিজের ছেলেকে। তার ছেলে মৃণালচন্দ্র দাসের দেহ ঝুলে আছে। সঙ্গে ঝুলছে ছেলের বন্ধু সুমনচন্দ্র দাস। এক রশিতে কীভাবে তারা আত্মহত্যা করল, এ নিয়েই তখন শুরু হলো জল্পনা-কল্পনা। পুলিশ আসে। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পায় না পুলিশ। মৃণালের বাবা এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মৃণালচন্দ্র দাসের বন্ধু সুমনচন্দ্র দাসের বাড়ি পাঠানডাঙ্গা মাঝিপাড়া গ্রামে। তারা দুই বন্ধু এলাকায় মাছের ব্যবসা করতেন। দুই বন্ধুর লাশ উদ্ধারের পর গ্রামবাসী বিশ্বাস করতে শুরু করে তারা আত্মহত্যা করেছে। গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই তদন্ত করে জানতে পারে, এটি আত্মহত্যা নয়। পরিকল্পিত হত্যা। একই রশিতে দুই বন্ধুকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ জানায়, ১১ আগস্ট এক রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃণালচন্দ্র দাস (২৪) ও সুমনচন্দ্র দাসের (২৩) লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে প্রচার করে অভিযুক্তরা। তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করতে গিয়ে প্রদীপ ও নিতাই নামে দুজনের নাম জানতে পারে। যাদের সঙ্গে মৃণালদের দ্বন্দ্ব ছিল। পুলিশ তিন দিন পর প্রদীপচন্দ্র দাসকে (২৪) গ্রেফতার করে। প্রদীপকে জেরা শুরু করলে সে ঘটনার কথা স্বীকার করে। পুলিশ এ খুনের নেপথ্যে জানতে গিয়ে এমন কিছু তথ্য জানতে পারে, যাতে পুলিশ হতবাক।

প্রদীপ পুলিশকে জানায়, সুমনচন্দ্র দাসের মায়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন একই এলাকার নিতাইচন্দ্র দাস। বিষয়টি জানাজানি হলে সুমন তার বন্ধু মৃণালকে সঙ্গে নিয়ে বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই বন্ধুর সঙ্গে নিতাইচন্দ্রের কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনার দিন ১১ আগস্ট নিতাইচন্দ্র দাস তার বন্ধু গ্রেফতার প্রদীপ্রন্দ্রসহ কয়েকজন মৃণাল ও সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটেন। সে মোতাবেক কৌশলে নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় দুই বন্ধুকে। এরপর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে এক রশিতে তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

পরে প্রদীপ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।

সর্বশেষ খবর