পদ্মা, যমুনা, গড়াই, আত্রাই ও ধলেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদীতে ৫৮ পয়েন্টে পানি বেড়েছে; কমেছে ৪৭ পয়েন্টে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার ভাগ্যকূল ও শীতলক্ষ্যার নারায়ণগঞ্জ পয়েন্টে পানি বাড়তে পারে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে দিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বাড়ছে নদী ভাঙনও। তলিয়ে যাচ্ছে বসতভিটাসহ নিম্নাঞ্চল। মানিকগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাজবাড়ীতে ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
ফরিদপুরে বাড়ছে ভাঙন : ফরিদপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন তা বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার কারণে ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল, ডিক্রিরচর, চর মাধবদিয়া, আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পদ্মায় পানি বাড়তে থাকায় পদ্মা তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোতে বেড়েছে নদীভাঙন। বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে ফরিদপুরে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ বর্তমানে নানা সমস্যার মধ্যদিয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
পাবনায় তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি : পাবনায় পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নদী পাড়ের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি নদী পাড়ের বেশকিছু গ্রামে বাড়ি ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রবিবার সকালের তথ্য অনুযায়ী পাবনায় যমুনা ও বড়াল নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা নদীর পানি। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে চর এলাকায় ৮০০ হেক্টরেরও বেশি ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাজবাড়ীতে পানিবন্দী সাড়ে ৭ হাজার পরিবার : রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার ৪টি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ফলে তাদের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও রান্না-বান্না নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে : পদ্মা নদীর পানি শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকালে ওই পয়েন্টে পদ্মার পানি ৪৭৭ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে, যা বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপরে। পানি বাড়ার কারণে নড়িয়ার ঈশ্বরকাঠি, শেহের আলী মাদবরকান্দি ও চেরাগ আলী ব্যাপারীকান্দি এলাকায় নদীর তীর উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকছে। ওই তিন স্থানে নড়িয়া-জাজিরা পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের বক নির্মাণের ইয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে সেখানে কর্মরত তিন শতাধিক শ্রমিককে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মানিকগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। এতে দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয় ও হরিরামপুরের নদী তীরবর্তী এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। পানিবন্দী হয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজারও মানুষ। অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এ ছাড়া পদ্মাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ইছামতী, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীর পানিও বাড়ছে। এদিকে দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি, বাঘুটিয়া, শিবালয়ের অন্বয়পুর, হরিরামপুর উপজেলার ধুলশুরা ও কাঞ্চনপুর, সদর উপজেলার কুশেরচর ও সিংগাইর উপজেলার জামশা এলাকায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এসব এলাকায় হুমকির মুখে রয়েছে বহু ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ফসলিজমি ও রাস্তাঘাট।
নাটোরে পানিবন্দী গুচ্ছগ্রাম : বিগত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভয়াল প্রমত্তা পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামসহ রসুলপুর গুচ্ছগ্রামের ৪০ ঘর অসহায় পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
যমুনার পানি বাড়ায় দুর্ভোগ : যমুনার পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জে নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। বসতভিটায় পানি ওঠায় অনেক ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। আউশ ধান ও পাট এবং শাকসবজি তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ভাঙন। নদী তীরবর্তী মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চৌহালী, শাহজাদপুর, কাজিপুরের চরাঞ্চলে অর্ধ শতাধিক বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।
ধরলার পানি বৃদ্ধিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে ধরলাসহ কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সকালে পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও বেলা ৩টার দিকে পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে এখনো ধরলা অববাহিকায় বহু বাড়িঘরে পানি রয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর রোপা আমন।
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        