মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হতাশায় নিজের বাইকেই আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

হতাশায় নিজের বাইকেই আগুন

পুলিশ সার্জেন্টের অব্যাহত মামলায় ক্ষুব্ধ এক মোটরবাইক রাইড শেয়ারিং চালক নিজের মোটরসাইকেলে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। চোখের সামনেই জ্বলতে থাকা জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বনটি পুড়ে শেষ হয়ে যায় মাত্র ১০ মিনিটেই। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ বলছে, বাইকের কাগজপত্র নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মামলা দেওয়ার আগেই চালক তার বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বাইক আগুনে পোড়ানোর ওই মুহুর্তে এক পথচারী ভিডিও করে ফেসবুকে শেয়ার করেন। মুহুর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাইকে আগুন দিয়ে চালক চিৎকার করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী একজন পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তখন চালক এসে তাকেই বাধা দেন। বলেন, ‘কেউ যাবেন না, আপনারা কেউ যাবেন না’ অন্য একজন সোহেলকে বলেন, ভাই মাথা ঠান্ডা করেন। মানুষ কতটা অসহায় হলে এমন কাজ করতে পারে-এ ধরনের মন্তব্যই বেশি করেছেন নেটিজেনরা। বাইকে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে মর্মান্তিক উল্লেখ করে পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপ-বেইজড ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশ (ডিআরডিইউ)।

বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া চালকের নাম শওকত আলম সোহেল। কেরানীগঞ্জের এই সোহেল ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ভালো আয় ছিল তার। করোনার ছোবলে অন্য হাজারো ব্যবসায়ীর মতো ধস নামে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়ে তার। জীবন জীবিকার তাগিদে মোটরসাইকেল কিনে ভাড়ায় চালাতে তিনি রাস্তায় নামেন। জানা গেছে, রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাওয়ে যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে শুরু হয় সোহেলের নতুন জীবনযুদ্ধ। কোনো রকমে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ বারবার মামলা দেওয়ায় হয়ে ওঠেন তিক্ত-বিরক্ত। সোমবার সকালে বাড্ডা লিংক রোডে এসে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন সোহেল। অফিস টাইমে রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ট্রাফিক সার্জেন্ট তার গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে যায়। তবে মামলা না দিয়ে কাগজপত্র ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানান সোহেল। কাগজপত্র ফেরত না পেয়ে একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, সোহেলকে থানায় এনে ঘটনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। তিনি জানিয়েছে, আগেও কয়েকটি মামলা হয়েছে তার গাড়ির বিরুদ্ধে। আবারও পুলিশ তার কাগজপত্র যখন নিয়েছে, তখন তিনি হতাশা ও আবেগ থেকে গাড়িতে আগুন দিয়েছেন। ওসি বলেন, ছোট ব্যবসা ছিল তার। করোনার কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। দু-তিন মাস ধরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তিনি।

বাড্ডা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া বলেন, ওই রাইডার আইন অমান্য করায় বাড্ডা লিংকরোড এলাকায় কর্তব্যরত সার্জেন্ট বাইকের কাগজ দেখতে চান। আইনগতভাবে এটা ওই সার্জেন্টের দায়িত্ব। কাগজ চেক করার সময় হুট করেই নিজের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন সোহেল। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। প্রাথমিকভাবে সোহেল জানিয়েছেন, তিনি মোটরসাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করেন। তার মোটরসাইকেলের কাগজ ঠিক থাকার পরেও বারবার মামলা দেয় ট্রাফিক পুলিশ। চলতি মাসেও পল্টনে একবার মামলা দেওয়া হয়। তাই রাগে ক্ষোভে বাইকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সার্জেন্ট মামলা দেননি বলে জানতে পেরেছি। তবুও সোহেল ও ওই সার্জেন্টকে থানায় এনে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হয়। সোহেল বারবার নিজের ক্ষোভের কারণে এমনটা ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, অফিস আওয়ারে গুলশানের লিংক রোডে যানজট হয়। মোটরসাইকেলগুলো রাস্তার পাশে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে রাখে, এতে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তাই দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট মোটরসাইকেল চালকদের কাগজপত্র নেন। কয়েকজনকে মামলা দেওয়া হলেও শওকত আলীর মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেওয়া হয়নি। মামলা দেওয়ার আগেই তিনি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।

রাইড শেয়ার চালকদের কর্মবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিআরডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, হয়রানির জন্য একজন চালক তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনাও যদি পুলিশকে নাড়া না দেয়, তাহলে কি আত্মাহুতি দিলে তাদের বিবেক নাড়া দেবে? তিনি বলেন, গাড়ি কোথাও ব্রেক করলেই সেখানেই ধরে ফেলে ট্রাফিক পুলিশ। সরকার আমাদের জায়গা নির্ধারণ করে দিক। তাহলে আমরা যত্রতত্র দাঁড়াব না।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর