শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

চুল কাটায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণে রুল

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অনশন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এক মাসের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পাশাপাশি রুলও জারি করেছে আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। রুলে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার বিষয়টি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং চুল কাটার ঘটনায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে একটি গাইডলাইন তৈরির নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চেয়েছে আদালত। স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে বুধবার সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় হাই কোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে তিনি রিট আবেদনটি দাখিল করেন।

এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় রাতে বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নাজমুল হোসেন তুহিন (২৫) ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের পদসহ তিনটি দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন ওই শিক্ষিকা। ওই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা : চুল কেটে দেওয়ায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য ভবনে। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার প্রমাণও পেয়েছেন তারা। অন্যদিকে স্থায়ী অপসারণের দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে অনশনে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আরেকটি অংশ বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ সময় তারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে নানা স্লোগান দেন।

শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি নিজেই কাঁচি হাতে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বলে অভিযোগে ওঠে। সেই শিক্ষার্থীদের একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়।

এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। যদিও তিনি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

অনশনে অংশ নেওয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন-মুক্ত ক্যাম্পাস চাই। এ কারণে প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য কয়েকটি ভবনেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমাদের অনশন ও আন্দোলন চলতে থাকবে।’ তারা বলেন, ‘আমরা ১৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে অংশ নিয়েছি। অন্যরা মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি পালন করছেন। অনশন চলাকালে হাবিবুর রহমান হাবিব ও মাজেদুল ইসলাম নামে দুজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে তারা আজকে আবারও অনশনে ফিরেছেন।’

তদন্ত কমিটির সভাপতি এবং রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক ও চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, ‘চুল কেটে দেওয়ার ঘটনাস্থলে একটি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ওই ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। ফুটেজে কাঁচি হাতে শিক্ষার্থীদের চুল কাটার ঘটনার সত্যতা মিলেছে।’ তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সদস্যরা মিলে ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছি। আজও বৈঠক করব। আশা করি আগামীকালের মধ্যে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর একটি প্রেস রিলিজ গণমাধ্যমকর্মীদেরও দেওয়া হবে। দেখানো হবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ।’

এদিকে আত্মহত্যা চেষ্টাকারী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন।

উল্লেখ্য, রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ে ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। চুল কেটে দেওয়ার অপমান সহ্য করতে না পেরে সোমবার রাতে শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিন অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে মঙ্গলবার থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও সব পরীক্ষা বর্জন করে আসছেন। বুধবার শুরু হয় আমরণ অনশন কর্মসূচি।

সর্বশেষ খবর