রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

একটি জিডি খুঁজে দিল নিখোঁজ নারীর লাশ

মির্জা মেহেদী তমাল

একটি জিডি খুঁজে দিল নিখোঁজ নারীর লাশ

২০১৫ সালের ৩ মে সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রামে কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট কেটে এক ব্যক্তি একটি ট্রাঙ্ক বাসে তুলে দেন। এ সময় তিনি হেলপারকে বলেন, ‘সামনের ভাটিয়ারী কাউন্টার থেকে এই টিকিটের যাত্রী উঠবে। কিন্তু পরবর্তী ওই কাউন্টার থেকে যাত্রী না ওঠায় বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে এবং বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে গাবতলী এসে পৌঁছায়। এরপর বাসের সব যাত্রী তাদের জিনিসপত্র নিয়ে নেমে যান। পরে হেলপার দেখেন, একটি ট্রাঙ্ক মালিকবিহীন পড়ে আছে।’

তখন বাসচালক-হেলপার মিলে ট্রাঙ্কটি নামিয়ে দেখেন এটি খুব ভারী। তাদের সন্দেহ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে দারুস সালাম থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে ট্রাঙ্কটি খুলে একজন অজ্ঞাতনামা তরুণীর মরদেহ দেখতে পান। মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। পরিচিতি শনাক্ত না হওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহটি দাফন করা হয়। পরে এ ঘটনায় দারুস সালাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহানুর আলী বাদী হয়ে মামলা করেন।

মামলা হওয়ার পর শুরুতে প্রায় তিন মাস তদন্ত করে থানা পুলিশ। এরপর ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর তদন্ত করেও এর রহস্য উন্মোচন হয়নি।

মামলাটি রোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। দুই বছর তদন্ত করে এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িত এক আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পিবিআই। পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) ইউনিট ইনচার্জ বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলমের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ইন্সপেক্টর আশরাফুজ্জামান ভিকটিমকে শনাক্ত করার জন্য সব ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম শহর ও জেলা এলাকার সব থানায় নিখোঁজ জিডির অনুসন্ধান করে তথ্য নিয়ে আসার জন্য পাঠানো হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে।

তদন্ত কর্মকর্তা এক সপ্তাহ ধরে কাছাকাছি প্রায় ১০-১২টি নিখোঁজ জিডির তথ্য উদঘাটন করেন। ২০১৫ সালের ১০ জুন ৫৯৯ নম্বর একটি জিডিতে দেখা যায়, শম্পা বেগম চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় নিহত শম্পা বেগমের ভগ্নিপতি আবদুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় জিডি করেন। ওই জিডির সূত্র ধরে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নান ও নিহত শম্পা বেগমের বাবা ইলিয়াস শেখের (অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তিনি জানতে পারেন, ২০১৩ সালে রেজাউল করিম স্বপন (অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী সদস্য) খুলনা তিতুমীর নৌ-ঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। এ সময় শম্পা হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করতেন। হাসপাতালে ইলিয়াস শেখের স্ত্রীর চিকিৎসার সময় তার মেয়ে শম্পার সঙ্গে রেজাউলের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রথমে প্রেম ও পরে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রেজাউল বদলি হয়ে চট্টগ্রাম চলে যান। শম্পাও কিছুদিন পর তার এক ফুপুর বাসায় থাকেন। তিনি ফয়’স লেক এলাকায় একটি হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করেন। পরে পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর নিভিউ আবাসিক এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের টিনশেড বাড়ির একটি বাসায় সাবলেট নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এভাবে তারা ২০১৪-২০১৫ সালের মে পর্যন্ত একত্রে বসবাস করেন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করলেও বিয়ে করেননি।

পরে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে রেজাউল করিম শম্পাকে ২০১৫ সালের ২ মে গভীর রাতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মরদেহ গোপন করার উদ্দেশ্যে একটি ট্রাঙ্কে ভরে ঈগল পরিবহনের বাসে তুলে দেন। শম্পার বাবাকে জানান, তাকে খুলনার বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে শম্পা বাড়িতে না পৌঁছালে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। না পেয়ে ভিকটিমের ভগ্নিপতি আবদুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় একটি জিডি করেন। শম্পার বাবা পরে ঘটনার বছর ২৭ মে আসামি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী চট্টগ্রাম অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর