শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

-ড. মো. জিল্লুর রহমান

সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেছেন, পৃথিবীর মধ্যে যত উন্নয়নশীল ও স¦ল্পোন্নত দেশ আছে, তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে  সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। সমুদ্রলেভেল থেকে বাংলাদেশ খুব বেশি উঁচু নয়। সমুদ্রের পানির  উচ্চতা এক মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। অসংখ্য মানুষ বাস্তুহারা হবে। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি আমাদের কৃষিজমিতে ঢুকে যাবে। কৃষিজমি উর্বরতা হারাবে। ফলন কমে যাবে। খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়বে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি আরও বলেন, এমনিতে আমাদের দেশ ঘনবসতিপূর্ণ। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দক্ষিণাঞ্চলের একটা অংশ তলিয়ে গেলে ওই অঞ্চলের মানুষ উদ্বাস্তু হবে। এই মানুষ তখন কোথায় যাবে? এটা আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এখন যে উপকূলীয় বাঁধগুলো আছে, সেগুলো খুবই দুর্বল। বিজ্ঞানসম্মতভাবে মজবুত করে করা হয়নি। প্রতি বছর বন্যায়, ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসে এমনিতেই অনেক বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে জলোচ্ছ্বাসের শক্তি আরও বাড়বে। এই বাঁধ সেই জলোচ্ছ্বাস প্রতিহত করতে পারবে না। এ ছাড়া তাপমাত্রা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়বে। আইলার পর সাতক্ষীরায় খাবার পানির চরম সংকট সৃষ্টি হয়, তার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটের মতো বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে কয়েক ডিগ্রি বেশি। এভাবে সারা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। বলা হচ্ছে, এই শতাব্দীর শেষে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে। কিন্তু, কেউই সেই অনুযায়ী কাজ করছে না। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী উন্নত বিশ্ব। তাদের বড় বড় শিল্প-কারখানা। অধিক যানবাহন। বেশিরভাগ কার্বন দূষণ তারাই ঘটাচ্ছে। তারা নিজেদের উন্নত করে ফেলেছে। আমরা উন্নয়নশীল। এখন আমাদের কার্বন নিঃসরণ বাড়বে। কিন্তু, এখন আমাদের উন্নয়নে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্যারিস সম্মেলনের অঙ্গীকার অনুযায়ী, এই শতাব্দীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার, সেগুলো কিন্তু হচ্ছে না। ফলে তাপমাত্রা হু হু করে বাড়ছে। কানাডার মানুষজন ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থেকে অভ্যস্ত। হঠাৎ তাদের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। দুই-তিন দিনে ৩৫০ জন মানুষ মারা গেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়লে এমন হিটওয়েভ বিভিন্ন জায়গায় হবে। গত জলবায়ু সম্মেলনে যে অঙ্গীকারগুলো করা হয়েছে, তা অনেকে মানেনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তো একেবারেই মানেননি। এবারের সম্মেলনে ওই অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে বিশ্বনেতাদের। জীবাশ্ম জ¦ালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সৌরবিদ্যুতে যেতে হবে। না হলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পৃথিবী বিপজ্জনক হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর