রবিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন

উৎসব করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

উৎসব করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আগুন

মাতুয়াইলে ফানুস ওড়াতে গিয়ে ভবনে আগুন লাগে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর সময় রাজধানীর অন্তত ছয়টি স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার মধ্যরাতে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ছয়টি ঘটনার মধ্যে দুটি নেভানোয় ফায়ার সার্ভিসকে কাজ করতে হয়েছে। বাকি চারটি ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তবে ফায়ার সার্ভিসের হিসাবের বাইরেও ফানুস থেকে আরও কয়েকটি স্থানে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। মুহূর্তেই নিভিয়ে ফেলায় এবং ফায়ার সার্ভিসকে না জানানোর কারণে সেগুলোর খবর সামনে আসেনি।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, ফানুস থেকে রাজধানীর ছয়টি স্থানে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, রায়েরবাগ, মিরপুর ও খিলগাঁওয়ে ঘটনাগুলো ঘটে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে একটি আবাসিক ভবনে আর ধোলাইখালে কয়েকটি দোকানে লাগা আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসকে কাজ করতে হয়েছে। বাকি আগুনের ঘটনায় কাজ করতে হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, শুক্রবার রাত ১২টা ২৪ মিনিটের দিকে মাতুয়াইল স্কুল রোডে একটি তৃতীয় তলার আবাসিক ভবনের ছাদে আগুন লাগে। একটি ফানুস উড়ে এসে ওই ছাদে পড়ে। ছাদে ফলের ঝুড়ি থাকায় সহজে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাড়ির ছাদে আতশবাজি ও ফানুস ওড়ান। এর একটি ভবনের ছাদে এসে পড়ে। ছাদে কাগজ, ফলের ঝুড়ি থাকায় আগুন ধরে যায়। আগুন লাগার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে বাসা থেকে নিচে নেমে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেন। এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা ঘরে ফেরেন। এক ব্যক্তি এই আগুনের ভিডিও ফেসবুক লাইভে শেয়ার করেন। এতে দেখা গেছে, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আশপাশের অনেকেই আগুন আতঙ্কে চিৎকার করছেন। আবার কেউ কেউ ঠিকই বর্ষবরণের উৎসবে মেতে ফের ফানুস উড়াচ্ছেন। লাইভে এক ঘণ্টাব্যাপী আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, রাত ১২টার একটু পরে তৃতীয় তলার ওই ভবনটির ছাদে আগুন লাগে। আমরা ধারণা করছি, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে উড়ানো ফানুস বা ফুটানো আতশবাজি থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। মাতুয়াইলে আবাসিক ভবনে আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই ধোলাইখাল এলাকায় দোকানে আগুন লাগার খবর আসে। এটিও ছিল ফানুস থেকে। তবে এ ঘটনায়ও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, রাত ১২টার আগে থেকেই পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বাড়ির ছাদে আতশবাজি ফোটাতে শুরু করেন, ফানুসও ওড়ান। ধোলাইখাল বড় মসজিদের সামনে একটি পাঁচতলা ভবন থেকে কিছু ফানুস উড়িয়েছিলেন ভবনের বাসিন্দারা। এর একটি ওপরে না উঠে, নিচে নেমে যায়। পরে সেটি ভবনের বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে জড়িয়ে গেলে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেই আগুন থেকে ভবনটির পাশের গাড়ির টায়ারের কয়েকটি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। সূত্রাপুর ফায়ার স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ফানুস থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, ৫২ নাসিরউদ্দিন সরকার লেনের ওই ভবনে গাড়ির পার্টস ছিল। আগুন এসব পার্টসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে দুটি ইউনিট নিয়ন্ত্রণে আনে। জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনের (৯৯৯) পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার জানান, তাদের কাছে আগুন লাগার সাতটি কল এসেছে। সবগুলোই রাজধানীতে। এর মধ্যে মাতুয়াইল আর ধোলাইখালে লাগা আগুনে ফায়ার সার্ভিসকে কাজ করতে হয়েছে। থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন ঘিরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে পটকা বা আতশবাজি ফোটানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু তা অমান্য করেই পুরোনো বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে দেখা গেছে। একযোগে ফোটানো হয় পটকা বা আতশবাজি। আর তাতে বিকট শব্দে কেঁপে কেঁপে ওঠে গোটা মহানগরী। ফানুসের আগুন ছিটকে পড়ে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে। কেউ কেউ এ আনন্দকে উপভোগ করলেও অনেকের কাছে তা ছিল বিরক্তির।

সর্বশেষ খবর