বুধবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

প্রাচীন পুথির পান্ডুলিপি ঘুণে খাচ্ছে

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

প্রাচীন পুথির পান্ডুলিপি ঘুণে খাচ্ছে

রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে নষ্ট হচ্ছে কয়েক হাজার মূল্যবান পুথির পান্ডুলিপি। সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা আধুনিক না হওয়ায় প্রাচীন এসব পান্ডুলিপি নষ্ট হতে বসেছে। এগুলো এখন প্রদর্শনও করা হয় না। স্টোর রুমের সেলফে পড়ে আছে পান্ডুলিপিগুলো। এসব পুথির ডিজিটাল কপিও নেই। জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আলী রেজা মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘সব প্রত্ন নিদর্শন স্টোর রুম থেকে বের করে ডিসপ্লের জন্য একটা মাস্টারপ্ল্যান দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মূল ভবনের বাইরে ফাঁকা জায়গাতে বহুতল বিল্ডিং নির্মাণ বা মূল ভবনের পেছনে পরিচালকের বাসভবনের ওপরে বহুতল ভবন নির্মাণ করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন হবে। তখন সবই আমরা প্রদর্শন করতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জিনিসেরই একটি মেয়াদকাল আছে। আমাদের এখানকার পুথিগুলো নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য একটি ডিজিটাল স্ক্যানারও চেয়েছি। আশা করছি তা পাব।’ জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রথম এই জাদুঘরে প্রস্তর ও ধাতব প্রত্ন ভাস্কর্য, টেরাকোটা, মুদ্রা ও পান্ডুলিপি, ধাতব সামগ্রী এবং শিলালিপি মিলে প্রায় ১৯ হাজারের মতো প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন আছে। এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ নিদর্শন প্রদর্শিত হয়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় সিংহভাগই রাখা হয়েছে স্টোর রুমে। প্রাচীন পুথির পান্ডুলিপিগুলো রাখা হয়েছে একটি ঘরে। সেগুলোও প্রদর্শনের জন্য নয়। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এগুলো নষ্টের পথে। কিছু কিছু পান্ডুলিপি এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।

জাদুঘরের তথ্যমতে, এখানে সাড়ে ৫ হাজার বছরের প্রাচীন পুথি সাহিত্যের পান্ডুলিপি আছে। এগুলোর অধিকাংশ সংস্কৃত, প্রাকৃত ও আদি বাংলা ভাষায় রচিত। এর মধ্যে সংস্কৃত আছে ৩ হাজার ৯০০টি। আর বাংলা আছে ১ হাজার ৭০০টি। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ১২৭৩ খ্রিস্টাব্দ এবং ত্রয়োদশ শতকের কোনো এক সময়ের তালপাতায় লিখিত ও রঙিন চিত্রকর্ম দ্বারা শোভিত দুটি অষ্ট সাহস্রিকা প্রজ্ঞা পারমিতা পান্ডুলিপি আছে এখানে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ১২টি প্রদর্শিত হচ্ছে। বাকিগুলো আছে জাদুঘরের স্টোর রুমে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এ জাদুঘরের পান্ডুলিপির ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ২৮টি সেলফে প্রাচীন সাহিত্যের নিদর্শন সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো কোনোটি ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। ২৮ নম্বর সেলফের একটি পুথি খুলে দেখা গেল, সেটি তাল পাতার পুথি। তবে ঘুণে ধরেছে। প্রতিটি পাতায় আছে ঘুণে খাওয়া ফুটো। এ অবস্থায় হাজার বছরের এসব ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘জাদুঘরে আমাদের অনেক নিদর্শন আছে। এগুলো কোনো কোনোটি আবার বিশ্বজোড়া পুথি। কিন্তু এগুলো তালপাতার ও অন্যান্য উপকরণের হওয়ার কারণে সেগুলো এখন নষ্টের পথে। তবে এগুলোকে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেখাতে হবে। প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই এগুলোর ডিজিটাল কপি করা প্রয়োজন।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর