রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রাতভর বোমা হামলা রুশ বাহিনীর

আভজ ঘাঁটি থেকে গোপন ম্যানুয়াল উদ্ধার

প্রতিদিন ডেস্ক

ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোলের আজভস্টল স্টিল কারখানার ভূগর্ভে আটকে থাকা ইউক্রেনের মেরিন সেনারা যুদ্ধবিরতির জন্য বার্তা পাঠিয়ে চলেছে। তবে রুশ বাহিনী বলেছে, আত্মসমর্পণ করলেই কেবল যুদ্ধবিরতি হবে। সূত্র বলছে, রুশ সেনারা স্টিল কারখানাটির ওপরে অবস্থান করলেও ভূগর্ভ ধ্বংস করার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কারণ ভূগর্ভে ইউক্রেন সেনারা বহু বেসামরিক লোকজনকে আটকে রেখে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে বড় হামলা চালালে সেনাদের সঙ্গে এসব লোকজনও প্রাণ হারাবে। এদিকে রুশ বাহিনী দোনবাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রাভিযান অব্যাহত রেখেছে। রুশ বিমানগুলো রাতভর দোনেৎস্ক এবং খারকভের টার্গেগুলোতে ব্যাপক বোমা বর্ষণ করেছে। সূত্র : আলজাজিরা, রয়টার্স, স্পুটনিক। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের খারকভ ও দোনেৎস্ক প্রদেশে প্রায় এক ডজন জায়গায় হামলা চালিয়েছে তাদের বাহিনী। এর আগে খারকভের পাশে ইউক্রেনীয় ফৌজের একটি অস্ত্রভাণ্ডার তারা দখল করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর পূর্ব ইউক্রেনের সামরিক অভিযান বাড়িয়ে তুলেছে রাশিয়া। গোটা দোনবাস অঞ্চল দখল করাই এখন তাদের উদ্দেশ্য। দোনবাসের পতন হলে তা হবে কিয়েভের জন্য বড় ধাক্কা।

এদিকে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ সরাসরি রাশিয়ার জয় মেনে না নিলেও বলেছে, মারিউপোল ‘পরাধীন’ হয়েছে। শহরটির বাইরে চলে যাওয়া মেয়র বাদিম বয়চেঙ্কো ইউক্রেনের সরকারি টিভি চ্যানেলে বলেছেন, মারিউপোলের সব বাসিন্দা যেন অবিলম্বে শহর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘এখন সবাইকে উদ্ধার করতে হবে। মারিউপোলে এখনো ১ লাখ মানুষ আটকে রয়েছেন। তাদের উদ্ধার করতে চাই। কিন্তু সবকিছুই এখন পুতিনের হাতে।’

মারিউপোল নিয়ে রাশিয়ার বিবৃতি : আটকে পড়া ইউক্রেন সেনাদের ‘যুদ্ধবিরতির আহ্বান’ সম্পর্কে রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনের সেনারা আত্মসমর্পণ করলেই মারিউপোল শহরে মস্কো যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করবে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মারিউপোলের আজভস্টল ইস্পাত কারখানার ভূগর্ভে আটকে রাখা বেসামরিক মানুষকে মুক্ত করতে রাশিয়া যে কোনো সময় যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তুত। তাদের যেন ইউক্রেন সেনারা মুক্তি দেয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আটকে থাকা ইউক্রেন সেনাদের জন্য যুদ্ধবিরতি শুধু তাদের আত্মসমর্পণের শর্তে হতে পারে।

উল্লেখ্য, মারিউপোল শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর রুশ বাহিনী এখন আজভস্টল শিল্প-কারখানার ভূগর্ভের ওপরে অবস্থান করছে। ভূগর্ভে বেসামরিক লোকজন আটকে থাকায় তারা এখানে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারছে না। রুশ বাহিনী আবারও বলেছে, আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেন সেনাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। সাদা পতাকা ওড়ালেই যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাশিয়ার এই প্রস্তাবের ব্যাপারে ইউক্রেন বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এর আগে রাশিয়া ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে তারা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।

এদিকে গতকাল রুশ বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা ইউক্রেনের একটি এসইউ-২৫ যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। একই সঙ্গে তিনটি এমআই-৮ হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে।

আরেক বিবৃতিতে রুশ বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা মারিউপোল শহরের কাছে ইউক্রেনীয় আজভ বাহিনীর একটি ঘাঁটি দখল করে সেখানে মার্কিন যুদ্ধাস্ত্রের গোপন ম্যানুয়াল (ক্লাসিফায়েড ম্যানুয়াল) পেয়েছে।  পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে যেসব অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে, এতে তার তথ্য রয়েছে। নথিতে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযান ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশাবলি রয়েছে। এ নথি রুশ বাহিনীর হাতে পড়ার আগেই ধ্বংস করার কথা ছিল। কিন্তু আজভ যোদ্ধারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। রুশ বাহিনী আরও জানায়, যে ম্যানুয়াল উদ্ধার করা হয়েছে, তা ইউক্রেনীয়, রুশ ও ইংরেজি ভাষায় লেখা। ওই ম্যানুয়ালের ভিডিওচিত্র ধারণ করেছেন এক সাংবাদিক। নথিটি যে ঘাঁটিতে পাওয়া  গেছে, সেখানে এসএস মেদভেদি নামে একটি নাশকতাকারী দল অবস্থান করেছিল। ম্যানুয়ালগুলোর একটিতে ফোর্ট হুয়াচুকার মার্কিন সেনা গোয়েন্দা কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আরেকটি মার্কিন সেনাবাহিনী বিভাগের প্রকাশিত।

জেলেনস্কির সতর্কবার্তা : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা সূচনামাত্র। ভ্লাদিমির পুতিন শেষ পর্যন্ত তাঁর সেনাদের পশ্চিমের অন্য দেশগুলো দখলের নির্দেশ দেবেন। বস্তুত ইউক্রেনের পশ্চিমে প্রতিবেশী দেশ মালদোভা হবে প্রথম টার্গেট।’

সর্বশেষ খবর