মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন জীবন

আবদুল জব্বারের বলী খেলার সর্বশেষ আসরে সমানতালে টেক্কা দিয়েও শাহজালাল বলীর কৌশলের কাছে হেরে যান তারেকুল ইসলাম জীবন বলী। বাগে পেয়েও তিনি ছুঁতে পারেননি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। ট্রফিতে চুমু দিতে না পারার আক্ষেপ পোড়াতে থাকে জীবনকে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছর খেলা বন্ধ থাকায় অপেক্ষা দীর্ঘ হলেও একে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নেন তিনি। ভুল শোধরাতে অব্যাহত রাখেন কঠোর পরিশ্রম। নিজেকে তৈরি করেন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। দুই বছর পর গতকাল চট্টগ্রামের লালদীঘির বলীর মঞ্চে বিজয় কেতন উড়িয়েছেন। সেই শাহজালাল বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জীবন নিয়েছেন মধুর প্রতিশোধ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জীবন উল্লাস করতে করতে ঝেড়ে ফেলেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার আক্ষেপ। মেতে ওঠেন উল্লাসে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনুভূতি প্রকাশ করে জীবন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল জব্বারের বলী খেলার চ্যাম্পিয়ন হব। গতবার হতে না পেরে শপথ নিয়েছিলাম পরের বার জেতার। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। অবশেষে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে ভীষণ খুশি হয়েছি।’ চ্যালেঞ্জিং রাউন্ড, নক আউট পর্ব, সেমিফাইনাল শেষে ফাইনালে ওঠেন গতবারের দুই ফাইনালিস্ট জীবন বলী ও শাহজালাল বলী। ৪টা ২০ মিনিটে শুরু হয় জব্বারের বলী খেলার চূড়ান্ত পর্ব। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের বলীর মঞ্চে একের পর এক কসরত করতে থাকেন হেভিওয়েট এ দুই বলী। দুই বলীয়ান শক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে মোকাবিলা করতে থাকেন একে অন্যের আঘাত। প্রায় ৩০ মিনিটের খেলায় একে অন্যকে ঘায়েল করতে না পারলেও কৌশল ও দক্ষতার নৈপুণ্যের কারণে রেফারি আবদুল মালেক জীবনকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন। এর আগে জব্বারের বলী খেলায় ৭২ জন বলী অংশগ্রহণ করলেও নক আউট পর্বে লড়েছেন ৪০ জন। প্রথম পর্ব চ্যালেঞ্জিং রাউন্ড, নক আউট পর্ব, সেমিফাইনাল পর্বে অংশ নেন। জব্বারের বলী খেলা ঘিরে লালদীঘি এলাকার কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বসেছে বৈশাখী মেলা। যাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন হাজারো বিক্রেতা। এ মেলা থেকেই সাংসারিক নিত্যব্যবহার্য ও গৃহস্থালি পণ্য কিনতে ভিড় করেন ক্রেতা।

তারা মেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে কেনেন হাতপাখা, শীতলপাটি, ঝাড়ু, মাটির কলস, মাটির ব্যাংক, রঙিন চুড়ি, ফিতা, হাতের কাঁকন, বাচ্চাদের খেলনা, ঢাকঢোল, মাটি ও কাঠের পুতুল, বাঁশি, তৈজসপত্র, আসন, চৌকি, খাট, আলমারি, ফুলদানি, তালপাখা, টব, হাঁড়ি-পাতিল, দা-ছুরি, কুলা-চালনিসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র।

উল্লেখ্য, ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। এটি জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর ১২ বৈশাখ নগরের লালদীঘি মাঠে বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলী’।

সর্বশেষ খবর