মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

জয় পুতুলকে নিয়ে সড়কপথে টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের মাঠের কর্মীরা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জয় পুতুলকে নিয়ে সড়কপথে টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে গতকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার পথে পদ্মা সেতুতে সেলফিতে অংশ নেন -পিআইডি

দীর্ঘদিন পর সড়কপথে পিতৃভূমি টুঙ্গিপাড়ায় গেলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। গতকাল সকাল ৮টায় সড়কপথে গণভবন থেকে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।

জীবনে বহুবার সড়কপথে পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেও শেখ হাসিনার এবারের যাত্রা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্যরকম ভালো লাগারও। কারণ স্বপ্নের পদ্মা সেতু পার হয়ে তিনি সাতসকালে পৌঁছেছেন আপন ভুবনে। সব বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সেই সেতুর ওপর দিয়ে বাড়ি যাওয়া অন্যরকম এক আনন্দ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন মেয়ে পুতুলকে নিয়ে গেলেও এই প্রথম মায়ের সঙ্গী হলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ফলে পুরো পরিবারের জন্য এ এক বাড়তি আনন্দের। যে কারণে আনন্দক্ষণের স্মৃতি ধরে রাখতে ভুলেননি তাঁরা। এক ফ্রেমে মা এবং বোনকে নিয়ে হাসিমুখে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশনে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘পদ্মা সেতু’। ছবি দেখে বোঝা গেছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মা ও ভাইকে সেলফিতে বন্দি করেছেন। তিনজনের এমন ছবি যেন বলে দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এবারের টুঙ্গিপাড়া সফর কতটা আনন্দ ও তৃপ্তির। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। একই সঙ্গে মুখে হাসি ছিল সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলেরও। জানা গেছে, সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় টোল দিয়ে সেতু পার হন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকাল ৮টার কিছুক্ষণ পর টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। জানা গেছে, যাওয়ার পথে পদ্মা সেতুর মাঝামাঝি গিয়ে পুত্র ও কন্যাকে নিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্তের ফলকের সামনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সেখানে প্রায় আধাঘণ্টার মতো যাত্রাবিরতি নেয় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। সেখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। যাত্রাবিরতি শেষে তাঁরা টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। সোজা চলে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাড়িতে। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর যাত্রা উপলক্ষে মাদারীপুরের শিবচরের পাচ্চর প্রান্তে সড়কের পাশে জড়ো হন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারও প্রদর্শন করেন।

আওয়ামী লীগের মাঠের কর্মীরা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন :  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শত নির্যাতনের মধ্যেও আওয়ামী লীগ সবসময় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ছিল। মাঠের কর্মীরা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারাই দলকে ধরে রেখেছেন। গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমালে আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, জেল-জুলুম হয়েছে। অনেকে মারা গেছেন, অনেক লাশ হারিয়ে গেছে। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, এরশাদ, জিয়া সব আমলেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে আমি যখন দেশে ফিরে আসি, তখন সবচেয়ে অবহেলিত ছিল দক্ষিণাঞ্চল। উত্তরাঞ্চল ছিল মঙ্গাকবলিত। তখন মানুষের খাবার ছিল না, রোগের চিকিৎসা ছিল না। আর প্রতি বছর দুর্ভিক্ষ হতো। তখন থেকে আমার একটা প্রতিজ্ঞা ছিল, যখন সুযোগ পাব তখন দেশের জন্য কাজ করব। এখন উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা নেই। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলেও ব্যাপক উন্নয়ন হবে। মতবিনময় সভায় শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, নুর-ই আলম চৌধুরী এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ রকিব হোসেন, মৃণাল কান্তি রায় চৌধুরী, মো. বাবুল শেখ, শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল প্রমুখ দলীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। ১১টা ৪৩ মিনিটে পদ্মা সেতু হয়ে সড়ক পথে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর টুঙ্গিপাড়ায় এটিই তাঁর প্রথম সফর। আমাদের ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর টুঙ্গিপাড়া সফরকে স্বাগত জানান যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার পৌরসভা ভবন সংলগ্ন সড়কের দক্ষিণ পাশ দিয়ে নিক্সন চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হতে থাকেন। সকাল ৯টার দিকে নিক্সন চৌধুরী মহাসড়কে এসে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একাত্ম হন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর