শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

আজ জাতীয় কবির ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

আজ জাতীয় কবির ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী

মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি,/আর হাতে রণ-তূর্য! কিংবা মোর প্রিয়া হবে এসো রানী,/দেবো খোঁপায় তারার ফুল- গান আর কবিতায় এভাবেই কখনো দ্রোহের আগুনে জ্বলে উঠেছেন আবার কখনো প্রিয়ার ভালোবাসার আকুলতায় প্রেমের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

আজ ১২ ভাদ্র দ্রোহ, প্রেম, চেতনার কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা ১৩৮৩-এর (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

নানা আয়োজেনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ দিনব্যাপী জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে থাকছে- কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা, ফাতিহা পাঠ, দোয়া, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/যেন গোর থেকে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই। মসজিদের পাশে সমাহিত করার জন্য এ গানের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষীদের অনুরোধ করে গেছেন। যে কারণে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং দার্শনিক। কাজী নজরুল ছিলেন বাংলা সাহিত্যর অনন্য রূপকার। কবিতার পাশাপাশি সংগীতেও তিনি সৃষ্টি করেছেন অনন্যতা। রাগ-রাগিণী আর শব্দের ব্যঞ্জনায় গান ও কবিতার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে তিনি যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন ঠিক একইভাবে উপন্যাসে জীবন তুলে এনেছেন তীক্ষè দৃষ্টিতে। লেখনীর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন ক্ষয়িষ্ণু সমাজ। দারিদ্র্যের কারণে মাত্র ১০ বছর বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয় কবিকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর পেশা হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতা। শুধু কলমেই দ্রোহের আগুন জ্বালাননি, দেশমাতৃকার জন্য অস্ত্রহাতে যুদ্ধও করেছেন সৈনিক কবি। নিজের লেখনীর মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতার বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন আজীবন আপসহীন কবি। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে উৎখাতের আন্দোলনে তাঁর রচিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার পর স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠার কারণে কবিকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯৪২ সাল অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারানোর আগ পর্যন্ত নজরুল ছিলেন সৃষ্টিশীল। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’। এর মাধ্যমে বাংলা কাব্যজগতে নতুন দিনের সূচনা হয়। এ কাব্যগ্রন্থসহ ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’ ‘কামাল পাশা’, ‘শাত-ইল-আরব’, ‘আগমনী’, খেয়াপারের তরণী’সহ প্রতিটি কবিতাই বাংলা কবিতার ভুবনে নতুন বাঁক সৃষ্টি করে। সাহিত্যের সব সৃজনশীলতা ছড়িয়ে সংগীতেও নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ রাখেন নজরুল। প্রায় ৪ হাজার গান রচনা ও সুর করে এ দেশের সংগীতাঙ্গনের জন্য এনেছেন বিরল সম্মান ও খ্যাতি।

ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে এনে তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি দেয়। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে এ দেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয় কবিকে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর