বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান রূপসা রেলসেতু

নতুন গতি পাবে সমুদ্র বাণিজ্য, দ্রুতগতিতে চলছে কাজ

জয়শ্রী ভাদুড়ী, রূপসা থেকে ফিরে

দৃশ্যমান রূপসা রেলসেতু

শরতেও বেশ উত্তাল রূপসা। ঝকঝকে নীল আকাশ, প্রকৃতি উজাড় করা বাতাস সঙ্গে টুং টাং শব্দ। এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় লোহার পাত কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা। এগিয়ে চলছে খুলনার রূপসা নদীর ওপর রূপসা রেল সেতু নির্মাণ কাজ। স্টিলের কাঠামোতে নির্মাণাধীন সেতুটি খুলনাকে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সংযোগ করেছে। খুলনা-মোংলা রেলসেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অমৃতোষ কুমার ঝা বলেন, ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর পণ্য পরিবহনে চাপ অনেক বেশি। তাই মোংলা বন্দরকে আরও গতিশীল করা জরুরি হয়ে পড়েছে। খুলনার সঙ্গে মোংলার সংযোগ বাড়াতে রূপসা রেল সেতু বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এই সেতু ব্যবহার করে ভবিষ্যতে ভুটান ও নেপালের মধ্যেও পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। ফলে, এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক গতি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশাকরি।’ খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের ফলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অংশের সংযোগ বাড়বে। একই সঙ্গে রেল ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি বিকল্প রুট সৃষ্টি করবে। খুলনা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল, রূপসা নদীতে রেল সেতু নির্মাণ। সেতু নির্মাণের ফলে মোংলা বন্দর যেমন আরও গতিশীল হবে, তেমনি এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পাবে। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তব। গত সোমবার রূপসা রেল সেতু অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, উত্তাল রূপসা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে রূপসা রেল সেতু। নদীর এ পাড়-ওপাড়কে সংযোগ করেছে সেতুটি। সেতুর স্টিলের কাঠামো বসানো হয়েছে। অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। সূত্র জানায়, ভারত সরকারের রেয়াতযোগ্য লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্প। এর একটি অংশ এই রূপসা রেল সেতু। এর নির্মাণকাজ চলতি বছর ২৫ জুন শেষ হয়েছে। ভারতীয় ইপিসি ঠিকাদার মেসার্স এলঅ্যান্ডটি এই ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ সিঙ্গেল ট্র্যাক রূপসা রেল সেতু নির্মাণ করে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৮৮ দশমিক ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর শুধু রূপসা সেতু নির্মাণের ব্যয় ১৬৯ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রূপসা সেতু প্রকৌশলগত দিক থেকে এটি একটি অনন্য কীর্তি। এটির পাইলিংয়ের জন্য বেস গ্রাউটিং নামক একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ভায়াডাক্ট সেকশনে ৮৫৬টি পাইল ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা হয়েছে। আর ৭২টি পাইল ফাউন্ডেশন স্টিল ব্রিজ সেকশনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, যার গড় পাইল দৈর্ঘ্য ৭২ মিটার। নদীতে নৌ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেতুটিতে নেভিগেশন ফেন্ডার পাইল, যা রয়েছে পায়ারের নিচের দিকে। মূল সেতুর নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স স্ট্যান্ডার্ড হাই-ওয়াটার লেভেল থেকে ১৮ মিটারেরও বেশি। স্টিলের তৈরি এই সুপারস্ট্রাকচার সেতুটির নির্মাণসামগ্রী ভারত থেকে সড়ক, সমুদ্র ও অভ্যন্তরীণ নদীপথে আমদানি করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, রূপসা রেল সেতু দেশের রেল ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি বিকল্প রুট সৃষ্টি করবে। এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর জন্য বন্দরটি ব্যবহার এবং উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ দেবে। রূপসা রেল সেতু এবং খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইনটি পণ্য পরিবহনে সুবিধা তৈরি করবে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে এই সহজ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যসহ অনায়াসেই স্থানীয় বাজারগুলোতে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশিষ্ট স্থানগুলোতে পর্যটনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর