বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ‘পলিনেট হাউস’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ‘পলিনেট হাউস’

সবজি চাষের জন্য দেশের সবচেয়ে উপযোগী জেলা রাজশাহী। এ জেলার কৃষকরা আছেন শীর্ষে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কৃষিক্ষেত্রে বেড়েছে ঝুঁকি। এ অবস্থায় ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি। তাই কৃষিকে বাঁচাতে নতুন নতুন গবেষণা শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। এরই একটি অংশ ‘পলিনেট হাউস’। কৃষি বিভাগ বলছে, জলবায়ু ঝুঁকির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানের নতুন উদ্ভাবন ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। সবজি চাষসহ আধুনিক কৃষিকাজের জন্য এখন নতুন প্রযুক্তি ‘পলিনেট হাউসের’ জুড়ি নেই। তাই কৃষিতে নতুন সংযোজন হয়েছে ‘পলিনেট হাউস’। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোনো বেগ পেতে হবে না। ‘পলিনেট হাউস’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র দাবদাহ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে শাক-সবজি এবং ফলমূলসহ সব ধরনের কৃষিপণ্য। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে দেশের সব বিভাগে অন্তত একটি করে পলিনেট হাউস নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। তা দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছেন কৃষক। দেশের সবজি ভান্ডার খ্যাত রাজশাহী বিভাগের এমন ২১টি ‘পলিনেট হাউস’ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়িতে তৈরি পলিনেট হাউসে সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষক। পবা উপজেলার খড়খড়িতে ‘কৃষক বন্ধন বিসমিল্লাহ্’ নার্সারির স্বত্বাধিকারী শামসুল আলম কাদুর ২৫ শতক জমিতে কৃষি বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ সরকারি সহযোগিতায় পলিনেট হাউস করে দেওয়া হয়েছে। এতে উন্নত মানের পলি ওয়ালপেপার ব্যবহার করা হয়েছে। লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর পলিপেপার দিয়ে তিনটি শেডে এই পলিনেট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এর স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে প্রায় ২০ বছর। প্রথমবার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পুরো খরচ দেওয়া হয়েছে। তবে এই টাকা শোধ দিতে হবে না। শামসুল আলমকে একটি শর্ত দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তা হলো- এখানে উৎপাদিত বীজ, শাক-সবজি ও ফলমূল স্থানীয়ভাবে সবার কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে হবে। সংরক্ষণ করতে হবে রসিদ বই। নার্সারির স্বত্বাধিকারী কাদু বলেন, তার নার্সারির পাশেই এই পলিনেট হাউস নির্মাণ করে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। গত জুলাই থেকে এর ভিতরে চাষাবাদ শুরু করেছেন। তিনি ৮০ হাজার টাকার বীজ বুনেছেন। এখান থেকে চারা উৎপাদন করছেন। এখানে শীতকালীন টমেটো, ফুলকপি ও কাঁটা বেগুন এবং চায়না বেগুনের বীজ বুনেছেন। আপাতত তিনি বীজ থেকে চারা উৎপাদন করছেন। এরপর অন্যান্য ফসল চাষের ব্যাপারেও ভাববেন। তবে পলিনেট হাউসের মধ্যে এই দুই মাসের মধ্যেই তিনি উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিভাগ জানায়, পলিনেট হাউসে ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রঙিন (হলুদ) তরমুজ, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস ও অন্যান্য অসময়ের সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালেও ফলবে শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে টমেটো, ফুলকপি, বেগুন, গাজর ইত্যাদি আছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, অসময়ে সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউস আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নতুন সংযোজন। এখানে ফসলের উৎপাদন ২০ শতাংশ বেশি। পোকামাকড়ের আক্রমণও ৭০ শতাংশের কম। উৎপাদন খরচও কম।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী জেলায় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পবায় পলিনেট হাউস স্থাপন করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছরই সব ধরনের সবজি চাষ করতে পারবেন।

 

সর্বশেষ খবর