শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মহাসড়কে সক্রিয় গন্তব্য পার্টি

২ শতাধিক ছিনতাই ও ডাকাতিতে জড়িত চক্র মাইক্রোবাস ব্যবহার করে ফাঁদ

আলী আজম

মহাসড়কে সক্রিয় গন্তব্য পার্টি

সারা দেশে মহাসড়কগুলোতে বাসে যাত্রী উঠিয়ে, যাত্রী বেশে বাসে উঠে কিংবা সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অর্ধশত চক্র নানা কৌশলে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন জেলার সঙ্গে ঢাকাকে যুক্ত করা মহাসড়কগুলোতে। সম্প্রতি সময়ে ‘গন্তব্য পার্টি’ নামে একটি চক্র মহাসড়কে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন গন্তব্যগামী যাত্রীদের টার্গেট করে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে সর্বস্ব হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যারা ছিনতাই ও ডাকাতিতে বাধা দিচ্ছে তাদের হাত, পা ও মুখ বেঁধে চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। চক্রটি সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার পর কাঁচামরিচ ভেঙে ভুক্তভোগীদের চোখে মেখে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। শুধু তাই নয়, ছিনতাই বা ডাকাতি করতে খুন করতেও তারা পিছপা হচ্ছে না। এমনই একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর গন্তব্যের কথা বলে উঠিয়ে নেওয়ার পর সর্বস্ব লুটে নেওয়ার কৌশল সম্পর্কে জানতে পারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেফতার গন্তব্য পার্টির তিন সদস্য মহাসড়কে দুই শতাধিক ছিনতাই ও বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এ কাজে তারা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, টঙ্গী-গাজীপুর, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে টার্গেট করছে। যখন মহাসড়কের যাত্রী মেলে না, তখন রাজধানীর মধ্যেই তারা একই কৌশলে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করছে। যাত্রী ওঠানোর কৌশল হিসেবে তারা নতুন নতুন অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাস কাউন্টারে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে যেসব যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের পাশে গিয়ে অবস্থান নেয় চক্রের ২-৩ জন সদস্য। গাড়ি সংকটে বিশাল ভোগান্তি থেকে কবে রেহাই মিলবে? এমন কথোপকথন দিয়ে শুরু হয় ওই যাত্রীর সঙ্গে ভাব জমানো। এক পর্যায়ে জানতে চাওয়া হয় গন্তব্য সম্পর্কে। সরল বিশ্বাসে কেউ গন্তব্য বলে দিলে কয়েক মিনিটের মধ্যে সামনে এসে দাঁড়ায় একটি মাইক্রোবাস। পরে সেটির চালক ওই গন্তব্যে কেউ যাবে কি না বলে ডাকতে থাকে। ভাড়া বলা হয় বাস ভাড়ার সমান। তখন ওই যাত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যরা বলতে থাকে, বাস কখন আসবে তার ঠিক নেই। বাস ভাড়ার সমান টাকা যখন চাচ্ছে চলুন মাইক্রোবাসেই চলে যাই। অল্প সময়ের খাতিরে ওই যাত্রী মাইক্রোতে উঠলে কিছু দূর নিয়ে হাত-পা বেঁধে লুটে নেওয়া হয় সর্বস্ব। ভুক্তভোগীর চোখে কাঁচা মরিচ মাখানো হয়। এরপর তাকে নির্জন জায়গায় ফেলে চম্পট দেয় চক্রের সদস্যরা। শুধু তাই নয়, কাউন্টারে ভিড় দেখলে পুরো গাড়ি ভর্তি করে ওঠানো হয় যাত্রী। পরে মহাসড়কের নির্ধারিত স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যরা সব যাত্রীর মোবাইল ও টাকাসহ সর্বস্ব লুটে নিত। এসব ঘটনায় তেমন কেউ মামলা করতে আগ্রহী না হওয়ায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল চক্রটি। এখনো এই চক্রের পাঁচজন সদস্য ছিনতাইয়ে সক্রিয় রয়েছে। যাদের বাড়ি বরগুনা ও পটুয়াখালীতে। গাড়ি নিয়ে ঢাকা এসে যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে উঠিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়ে আবারও নিজ জেলায় চলে যেত তারা।

১৬ বছর ধরে এই চক্রটি মহাসড়কে সক্রিয় থেকে গন্তব্যে নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে আসছিল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর এই গন্তব্য পার্টির খপ্পরে পড়েন রফিক (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যক্তি। তাকে একই কায়দায় মাইক্রোবাসে তুলে ৩০০ ফিট এলাকায় নিয়ে ছুরি ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে তার হাত-পা বেঁধে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার কাঞ্চন ব্রিজের পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। এ ঘটনায় তিনি ডিএমপির খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা (নম্বর-১৫) দায়ের করেন। এরপর গত ১৭ ও ২৫ অক্টোবর ধারাবাহিক অভিযানে চক্রের অন্যতম হোতা দেলোয়ার হোসেন ওরফে সল্টু, কামাল মৃধা ও আলমগীর খাঁ নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় তাদের ব্যবহৃত একটি সাদা মাইক্রোবাসও (ঢাকা মেট্রো-চ ১৫-৬৯০৪)।  গন্তব্য পার্টির তিন সদস্যকে গ্রেফতারে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) এস এম রেজাউল হক বলেন, ডিএমপির খিলক্ষেত থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার সূত্র ধরে এই চক্রের সন্ধান মেলে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের আরও বেশ কয়েকজন সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় সারা দেশে ৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় ছয়জন এজাহারনামী আসামিসহ ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর