রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বাড়ছে নজরদারি

ইপিবি নয় এখন থেকে স্বাস্থ্য সনদ দেবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

উবায়দুল্লাহ বাদল

বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। এখন থেকে বাংলাদেশ থেকে খাদ্যপণ্য/প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির জন্য ‘স্বাস্থ্য সনদ’ দেবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এ সনদ এতদিন দিচ্ছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ৬ সেপ্টেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত জানিয়ে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চিঠি পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে সম্প্রতি চিঠি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়- সম্প্রতি এক আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে খাদ্যপণ্য/প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ‘স্বাস্থ্য সনদ’ ইস্যুর দায়িত্ব রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিবর্তে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তবে বর্তমানে যেসব সরকারি সংস্থা যেমন মৎস্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসেবে সনদ ইস্যু করছে তা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে খাদ্যপণ্য/প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ‘স্বাস্থ্য সনদ’ ইস্যুর দায়িত্ব রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিবর্তে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) ওপর ন্যস্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো। চিঠির পরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ২ অক্টোবর বিএফএসএকে চিঠি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর পরই সরকারি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তৎপরতা শুরু করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বিএফএসএ। এর ধারাবাহিকতায় আজ (রবিবার) কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে খাদ্যপণ্য রপ্তানির স্বাস্থ্য সনদ দেওয়া হচ্ছে। দুপুর ১২টায় প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণকক্ষে অনুষ্ঠেয় স্বাস্থ্য সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সনদ বিষয়ক ফোকালপারসন ও বিএফএসএ সদস্য (খাদ্যশিল্প ও উৎপাদন) প্রফেসর ড. মো. আবদুল আলীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সনদ ইস্যুর বিষয়ে ইপিবির এক্সপার্ট না থাকায় ওই দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হচ্ছে। কারণ আমরা নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করি। সম্প্রতি কিছু দেশ নিজেদের মান অনুযায়ী নতুন নতুন পয়েন্ট দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন চাইছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই মূলত এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- একটি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে ক্রেতা দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী পরীক্ষা করে ‘ফিট ফর হিউম্যান কনসাম্পশন’ সার্টিফিকেট দেওয়া গেলে কৃষিজাত ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি ১০ গুণ বেড়ে বাংলাদেশ প্রতি বছর ১৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে সার্টিফিকেট ইস্যু করার মতো অ্যাক্রিডেটেড ল্যাবও দেশে নেই। সঠিকভাবে মান নির্ধারণ ছাড়া রপ্তানির কারণে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি পেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পান, রাশিয়া আলু, চীন কাঁকড়া ও কুঁচিয়া এবং খাদ্যে শূকরের হাড় ও মুরগির বিষ্ঠার উপস্থিতির কারণে সৌদি আরব মিঠা পানির মাছ আমদানি বন্ধ রেখেছে। ফলে সবজি, মাছসহ বিভিন্ন কৃষি ও খাদ্যপণ্য উৎপাদনে শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে থাকলেও এসব পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ তলানিতে পড়ে থাকা একটি দেশ। বছরে প্রায় ১ হাজার ৬০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ০.০৬ শতাংশ। বাংলাদেশে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সনদ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, মাছ রপ্তানিতে মৎস্য অধিদফতর, মাংস ও পশুজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য রপ্তানিতে হালাল সার্টিফিকেট ইস্যু করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও উৎপাদন পর্যায়ে ১৮১টি পণ্যের বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সনদ দেয় বিএসটিআই। এসব প্রতিষ্ঠানের কারও ক্রেতা রাষ্ট্রগুলোর নির্ধারিত প্যারামিটার অনুযায়ী ‘ফিট ফর হিউম্যান কনসাম্পশন’ সার্টিফিকেট ইস্যুর সক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পাশাপাশি দেশে কৃষিপণ্যের অপচয় রোধ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডেটেড ল্যাব স্থাপনসহ মান নির্ধারণী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে একটি একক ‘হেলথ সার্টিফিকেশন অথরিটি’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর