রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে এসআইবিএল

----- জাফর আলম

শাহেদ আলী ইরশাদ ও সাইফ ইমন

ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে এসআইবিএল

ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ব্যাংকিং সেবা দিতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক চালু করেছে এসআইবিএল নাউ (SIBL NOW) নামে মোবাইল অ্যাপ। এ অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই গ্রাহকরা এখন ই-অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। এ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশে বসেও মোবাইল থেকেই ই-অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশের তিনটি শীর্ষ ইসলামী ব্যাংকের একটি হতে চায় বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)। এ জন্য ব্যাংকটি  প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ওপর সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। প্রচলিত প্রডাক্ট ছাড়াও রেমিট্যান্স বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন আমানত এবং বিনিয়োগ প্রডাক্ট চালু করেছে ব্যাংকটি। এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাফর আলম বলেন, আগামী দুই বছরে আমরা দেশের শীর্ষ তিনটি ইসলামী ব্যাংকের একটি হিসেবে আমাদের ব্যাংককে দেখতে চাই। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।

গত ২২ নভেম্বর ব্যাংকের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও এসআইবিএল বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করছে। সারা দেশে শাখা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সফলতার সঙ্গে বেশ ভালোভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে  ৩৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৩ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। চলমান ডলার সংকটের বিষয়ে এসআইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের রেমিট্যান্স সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭১ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা ১ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮ লাখ টাকার রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছি। যেটা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ১৬১ কোটি ২২ লাখ টাকা।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দিয়েছেন জাফর আলম। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানির মোট পরিমাণও ৩৫ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩১৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকায়। একই সময়ে বেড়েছে আমদানি। সেটি প্রায় ৪৩ শতাংশ বলে জানান তিনি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান আমদানির কারণে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ রেমিট্যান্স থেকে যে পরিমাণ আয় আসে আমদানি তার চেয়ে কম হয়। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমতি দিচ্ছি। যাতে দেশে  প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কোনো অভাব না হয়।

রেমিট্যান্স গ্রহণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ সম্পর্কে এসআইবিএল এমডি বলেন, আমাদের কাছে একটি ই-কেওয়াইসি-ভিত্তিক অ্যাপ রয়েছে। যা এসআইবিএল নাউ নামে পরিচিত। যেটা মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে রেমিটার নিজেই বিদেশে বসে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন এবং দেশে অর্থ পাঠাতে পারেন। জাফর আলম বলেন, এই অ্যাপটি আসলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠাতে রেমিটারদের উৎসাহী করছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এসআইবিএলসহ দুটি ব্যাংককে বহির্মুখী রেমিট্যান্স লেনদেনের অনুমতি দিয়েছে। আমরাই প্রথম সেবাটি চালু করেছি। এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ব্যাংকিংকে সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত এবং সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের ওপর আরও জোর দিচ্ছি। তিনি জানান, এসআইবিএল প্রচলিত প্রডাক্ট ছাড়াও সম্প্রতি বিভিন্ন অপ্রচলিত বিনিয়োগ এবং আমানত পণ্য চালু করেছে, যা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছে।

এ বিষয়ে জাফর আলম বলেন, আমরা বিভাগীয় ও জেলা এলাকায় ছাদের বাগান মালিকদের জন্য একটি বিনিয়োগ প্রডাক্ট চালু করেছি। যেখানে ছাদবাগান করতে আগ্রহী একজন ব্যক্তি কোনো প্রকার জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ঋণ পাচ্ছেন। ব্যাংকটি এসআইবিএল শিক্ষা, এসআইবিএল বিবাহ এবং এসআইবিএল স্বাস্থ্য নামে তিনটি আমানত প্রডাক্ট চালু করেছে। যেখানে গ্রাহক দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার জন্য তাদের অর্থ জমা করতে পারেন। এই পণ্যগুলোর অধীনে, আমানত স্কিমগুলো খোলার অন্তত দুই বছর পর ব্যাংক তাদের জমা করা অর্থের দ্বিগুণ বিনিয়োগ (ঋণ) বিতরণ করছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কোনো গ্রাহক তার পাঁচ বছর বয়সী শিশু সন্তানের জন্য এসআইবিএল শিক্ষা স্কিম খুললেন; ১৫ বছর পরে, তাদের প্রিয় পুত্র ও কন্যাদের উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। আমাদের কাছে তার আমানত জমা হলো ১০ লাখ টাকা, স্কিমের অধীনে আরও ১০ লাখ টাকা ব্যাংক তাকে দেবে। সুতরাং এটি অনেকের জন্য একটি ভালো স্কিম হবে। অন্য একটি প্রডাক্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য আমরা একটি পণ্য চালু করতে যাচ্ছি। যার অধীনে প্রবীণ নাগরিকরা তাদের অর্থ রাখতে পারবেন এবং অন্য আমানতকারীদের তুলনায় অতিরিক্ত ১ শতাংশ মুনাফা পাবেন। শুধু তাই নয়, এই ক্যাটাগরির আমানতকারীরা ঢাকার গ্রিন রোডে অবস্থিত এসআইবিএল ফাউন্ডেশন হাসপাতাল থেকে ৪০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা সুবিধাও পাবেন। এসআইবিএলের এই শীর্ষ নির্বাহী আরও বলেন, প্রয়োজনে আমরা ঢাকা সিটির মধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই সিনিয়র নাগরিকদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করব। ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকে সেবার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে সারা দেশে ব্যাংক তার নেটওয়ার্ক এবং কার্যক্রম সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে ব্যাংকটির শাখা সংখ্যা ১৭৯টি, উপ-শাখা ১৫৬টি এবং এজেন্টের সংখ্যা প্রায় ৩০০টি হলেও বছর শেষে ৩৫০টিতে পৌঁছবে।

সর্বশেষ খবর