বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ডিবির জালে পর্নো সিন্ডিকেট

মাহবুব মমতাজী

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘থ্রিসাম সেক্স’ নামে একটি গ্রুপ খোলা হয়। কয়েক বছর ধরে গ্রুপটি ফেসবুকে তৎপর। ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভারত ছাড়াও বাংলাদেশের অনেক নাগরিক সেই গ্রুপের ফলোয়ার। ছবি ও ভিডিও শেয়ার করতেও তারা যুক্ত। সবাই সেখানে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে যুক্ত হয়েছেন। তবে ওই গ্রুপে যুক্ত না হলে বোঝার উপায় নেই গোপনে কী চলে ওখানে।

সম্প্রতি ভয়াবহ এ বিকৃত পর্নো সিন্ডিকেটটি চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম-উত্তর বিভাগ।

দুই বছর ধরে নিজের স্বামী এবং ওই গ্রুপের অন্য ফলোয়ারদের দ্বারা পর্নোগ্রাফি ও যৌন নির্যাতনের শিকার এক নারী চিকিৎসক মামলা করেছেন। চলতি বছরের ৬ নভেম্বর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেছেন ডিবি কর্মকর্তারা।

মামলার পরই ওই নারী চিকিৎসকের স্বামী মইনুল ইসলাম খান, তার বন্ধু মুগদা মেডিকেল কলেজের ছাত্র নাজমুল হাসান নাবিল এবং পর্নো সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য ফুয়াদ বিন সুলতানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মইনুল ইসলাম খান ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত।

ডিবির সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম-উত্তর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ এই প্রতিবেদককে জানান, সিন্ডিকেটটি খুবই ভয়াবহ। এর তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কয়েকজন রয়েছেন তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

রমনা থানা থেকে পাওয়া মামলার এজাহারে জানা যায়, ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিয়ের পর থেকেই ওই নারীকে বিকৃত যৌনকাজে আসক্ত করতেন তার স্বামী। প্রথমে তিনি  বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। তার স্বামী নিয়মিত পর্নো ভিডিও দেখতেন। ওই বছরেরই ১৫ মার্চ তার নগ্ন ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। ২০২১ সালের ২২ জুলাই বেড়ানোর কথা বলে স্বামীর বন্ধু আরিফের মুগদা পেট্রোলপাম্পের পেছনের বাসায় ওই নারীকে নিয়ে যান। সেখানে ওই নারীকে বন্ধুর সঙ্গে পর্নোগ্রাফি করতে চাপাচাপি করতে থাকেন তার স্বামী। এরপর তাকে খাগড়াছড়ির সাজেকে ওই পর্নো গ্রুপের একজনের কাছেও নিয়ে যান। সেখানেও ওই নারীর ওপর যৌন নির্যাতন চলে। তার অশ্লীল ছবি তোলা হয়। এরপর তাকে রাজশাহীতে বেড়ানোর কথা বলে আরেক বন্ধুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ব্যক্তিও পর্নো গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। সেখানেও একই আচরণ শুরু হলে ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকায় ফিরে আসার পর চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর তিনি তার স্বামীর মোবাইল ফোনে তার কোনো পর্নো ভিডিও আছে কি না তা জানার জন্য চেষ্টা করেন। স্বামীর মোবাইল ফোন ঘেঁটে ওই নারী অর্ক চৌধুরী নামে ফেইক ফেসবুক আইডি খুঁজে পান। রিমু আরিফ নামে তার স্বামীরও একটি ফেইক আইডি পান। দুটিই পর্নো গ্রুপ থ্রিসাম সেক্সে যুক্ত করা। ওই গ্রুপের ধারণ করা তার নগ্ন ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা আছে। এ ছাড়া সেখানে তাকে নিয়ে অশ্লীল কথোপকথনও রয়েছে। এদিকে ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা ওই পর্নো সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত আদনান আহমেদ, সিলভার রেইন, ফাহমিদা আলম, তাশফিক হক, সুমন ইসলাম, সকাল খান, শাদমান সামির, টম অ্যাঞ্জেল এবং কাজী রফিকুল আলম নামে কয়েকজনের আইডি পেয়েছেন। যদিও এসবই ফেইক আইডি। তারা কয়েক দফায় প্রকৃত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সিঙ্গাপুরে অবস্থিত ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি চালাচালি করছেন। তাদের আশা দ্রুত সেসব ব্যক্তি গ্রেফতার হবেন।

 

সর্বশেষ খবর