শিরোনাম
রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিলাসী পণ্য আমদানি নিষিদ্ধের সুপারিশ

শাহেদ আলী ইরশাদ

বিলাসী পণ্য আমদানি নিষিদ্ধের সুপারিশ

ডলার সংকটের এই সময়ে বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলেছেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কতটুকু সাশ্রয় হচ্ছে এর কোনো হিসাব নেই। তাই চলমান সংকট থেকে উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হোক।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুর্যোগের এই সময়ে কম আমদানি করা দেশের জন্য ভালো। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে ডলারের এ ধরনের সংকট হয়নি। এটা সাময়িক একটা সংকট। এ সময়টাতে বিলাসী পণ্য আমদানি ও ব্যবহার না করলে কিছু হবে না। অবস্থার উন্নতি হলে তখন আবার ব্যবহার করা যাবে। এটা মেনে চলা উচিত।

তিনি বলেন, জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য পণ্যের এলসি খুললে ব্যাংকগুলোকে আইনের আওতায় আনা উচিত। কারণ এটা তো বাস্তবতা এখন একটু টানাটানির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের। এই সময়ে সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এসব এড়িয়ে চলা যায়।

৬ নভেম্বর গণভবনে দেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করতে সংশ্লিষ্ট দফতর ও মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ডলারের মজুদ ধরে রাখতে বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। দামি গাড়ি ও ফল আমদানির বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। ৩৪০টি পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা কার্যকরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে। কিন্তু আমদানি বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। ফলে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, এর তুলনায় আমদানিতে অনেক বেশি ডলার চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বেশির ভাগ ব্যাংক খাদ্যপণ্যের এলসি খুলতেও রাজি হচ্ছে না।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট ব্যাংকার মোহাম্মদ নুরুল আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান ডলার সংকটের মধ্যে জরুরি খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্য সব ধরনের পণ্য, বিশেষ করে বিলাসী পণ্য আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা উচিত। কারণ মানুষের জীবনধারণের জন্য বিলাসী পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্য জরুরি। আপাতত বিলাসী পণ্য আমদানির শুল্ক না বাড়িয়ে সরাসরি আমদানি বন্ধ রাখাই ভালো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের  তথ্যে দেখা যায়, দেশের বাণিজ্য ঘাটতি সেপ্টেম্বরে ছিল ৩০০ কোটি ডলার, আগস্টে ২৪৭ কোটি এবং জুলাইয়ে ছিল ২০৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ ঘাটতি বেড়েই চলেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের রপ্তানির তুলনায় দেশে আমদানি হয়েছে ৬৭৭ কোটি ডলারের বেশি পণ্য। ডলার সংকটের এই সময়ে পাকিস্তান ৩৮টি বিলাসী পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পণ্য আমদানিতে শুল্ক সমন্বয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এতে কত সাশ্রয় হচ্ছে, এর কোনো হিসাব নেই। আমদানি নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। উচ্চ শুল্ক বসতে পারে। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশ আমদানি নিষিদ্ধকরণে চলে গেছে অনেক দিন আগেই। তাই শুল্ক সমন্বয়ের বিষয়টি শক্তভাবে করা উচিত। সমন্বয়ের সময় এইচএস কোডের ৬ ডিজিট পর্যন্ত বিবেচনা করতে হবে। অবশ্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সুলভ করার উদ্যোগও থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর