বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বছরের শুরুতে সব বই পাবে না শিক্ষার্থীরা

♦ ছাড় দেওয়া হচ্ছে মানে ♦ উৎসব আংশিক দিয়ে ♦ সব পেতে এপ্রিল-মে : মুদ্রণ শিল্প সমিতি

আকতারুজ্জামান

প্রতি বছরের মতো এবারও বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করবে সরকার। তবে বই উৎসবের এ দিনে সব বই পাবে না ছাত্র-ছাত্রীরা। আংশিক বই দিয়েই হবে বই উৎসব। কোনো কোনো বই পেতে জানুয়ারি পেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর প্রায় সব শ্রেণির বইয়েই মানের ব্যাপারে কিছুটা ছাড় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্র বলছে- বই উৎসবের লক্ষ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। বাকি বই জানুয়ারিতে দেওয়া হবে। আর বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা বলছেন- প্রাথমিক, মাধ্যমিক মিলে প্রায় ৫০ শতাংশ বই ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। পুরো বই পেতে আগামী বছরের এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তথ্যমতে- আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৪৩ লাখ ৯২ হাজার ১৯টি, ইবতেদায়ীতে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার ১৪৪টি, দাখিল স্তরে ৪ কোটি ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮টি, মাধ্যমিক স্তরে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৫টি বই ছাপা হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের বইসহ সবমিলিয়ে মোট ৩৩ কোটি ৯৬ লাখ ৯ হাজার ৬৫৭ কপি নতুন বই ছাপানো হবে। জানা গেছে, প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেরিতে চুক্তি হওয়া, মাধ্যমিকের কয়েক শ্রেণিতেও দেরিতে চুক্তি করা, কাগজ সংকট, পাল্প সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পাঠ্যবই ছাপা বাদ দিয়ে নোট-গাইড ছাপানো ইত্যাদি কারণে বই ছাপাতে বিলম্ব হচ্ছে। এদিকে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে আগামী ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠদান শুরু হবে। পাঠ্যক্রম চূড়ান্ত করতে বিলম্ব হওয়া, পা-ুলিপি বিলম্বে প্রস্তুতকরণসহ নানা কারণে এই দুই শ্রেণির বই ছাপা কাজের টেন্ডার দিতেই প্রায় এক মাস দেরি হয়েছে।  এনসিটিবির বিতরণ শাখা সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ১৬ কোটি বই ছাপা হয়েছে। আর প্রাথমিকের প্রায় ৪ কোটি বই ছাপা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সবমিলিয়ে ৮০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। আশা করছি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে। চলতি শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার কার্যাদেশ পাওয়ার পর নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার কারণে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এনসিটিবি। এরমধ্যে আল আমীন প্রেসের ১ লাখ ফর্মা বই নষ্ট করা হয়েছে, সরকার প্রেসের বই নষ্ট করা হয়েছে ৩ লাখ ফর্মা। এ ছাড়া নিম্নমানের বই কেটে ফেলা হয়েছে সরকার অফসেট প্রেসের ২ লাখ ফর্মা, হাওলাদার অফসেট প্রেসের ৩ হাজার বই। নিম্নমানের বই আরও কেটে ফেলা হয়েছে ভাই ভাই প্রেস, সোনালি ওয়েব প্রিন্টার্স, মিরাজ প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, এসএস প্রিন্টার্স, সৃষ্টি প্রিন্টার্সসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের। তবে মুদ্রণ সমিতির নেতারা বলছেন, আগামী শিক্ষাবছরের জন্য ছাপানো সব বই-ই নিম্নমানের কাগজে ছাপা হচ্ছে। মাত্র অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বই লোকদেখানো হিসেবে নষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, ছাপা কারখানাগুলোতে রয়েছে কাগজ সংকট, পাল্প সংকট। ভালো মানের কাগজ উৎপাদন করাও সম্ভব হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত প্রাথমিকে ১৫ শতাংশ, মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৫৮ শতাংশ এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মাত্র ৩৭ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে। সে হিসাবে চলতি বছরে সবমিলিয়ে ৫০ শতাংশের বেশি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছবে না। পুরো বই পেতে আগামী বছরের এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বই ছাপানোর ক্ষেত্রে একেবারেই মানের কোনো তোয়াক্কা করছে না মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো। নোয়াখালীর অজোপাড়াগাঁয়ের একটি ছাপাখানাকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বই ছাপার কাজ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদবিরে তাকে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এসব বই ছাপার ক্ষেত্রে একেবারেই মানহীন বই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান গতকাল বলেন, বছরের শুরুতে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। বই ছাপার টেন্ডার দেওয়ার পর কাগজের দাম বেড়েছে, কাগজের সংকটও বেড়েছে। তাই মান শতভাগ রক্ষা করা যাচ্ছে না। মানের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। যথাযথভাবে মান রক্ষা করতে গেলে শিক্ষার্থীদের কাছে সময়মতো বই পৌঁছানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর