নওগাঁর মান্দা উপজেলায় স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় দুই প্রেমিকের পরিকল্পনায় চানাচুর বিক্রেতা মনসুর রহমানকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত পরিকল্পনাকারী ও নিহতের স্ত্রীর প্রেমিক দুই জাহাঙ্গীরের একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার রাতে ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, নিহত মনসুর রহমানের প্রথম স্ত্রী হাসিনা একাধিক পরকীয়ার সঙ্গে জড়িত। এমনকি জাহাঙ্গীর নামে স্থানীয় দুই যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়। তার এ পরকীয়ায় বাধা দিলে পরিকল্পিতভাবে মনসুরকে হত্যা করা হয়।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, নওগাঁর মান্দা এলাকার বাসিন্দা নিহত মনসুর ও গ্রেফতার জাহাঙ্গীর পাশের গ্রামের বাসিন্দা। নিহত মনসুর বিভিন্ন দোকানে চানাচুর বিক্রি করতেন। তিনি দুই বিয়ে করে স্ত্রীদের নিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। প্রথম স্ত্রী হাসিনা ও দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা। হাসিনা বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত। প্রথমে হাসিনা সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের (২৯) সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান। পরে মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় মনসুরের নিজ বাড়িতে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরসহ তার আরও কয়েকজন বন্ধু হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময় পাশের ঘরে হাসিনা ও জাহাঙ্গীরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান মনসুর। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় মনসুরের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এমন সময় জাহাঙ্গীরের বন্ধুরা মনসুর ও জাহাঙ্গীরের মধ্যে বিবাদ মীমাংসার কথা বলে মনসুরকে বাড়ির পাশের একটি বাগানে নিয়ে যান। এ ঘটনার সময় মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা জাহাঙ্গীর ও মনসুরকে বাড়ি থেকে বাগানের দিকে চলে যেতে দেখেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হাসিনা ও জাহাঙ্গীরের আপত্তিকর অবস্থা দেখে ফেলার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এ ঘটনার পেছনে মাস্টারমাইন্ড ছিল নিহতের স্ত্রীর প্রেমিক ও একই এলাকার মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীর। এক জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন সাহেব আলীর ছেলে ও হাসিনার আরেক প্রেমিক জাহাঙ্গীর। হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা দুই-তিন দিন আগে থেকে মনসুরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন। মনসুরকে হত্যার মাস্টারমাইন্ড জাহাঙ্গীর আগে থেকেই বাগানে অপেক্ষায় ছিলেন। বাগানে নিয়ে যাওয়ার পর মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে সবাই মিলে বেধড়ক পিটিয়ে মনসুরকে গুরুতর আহত করেন। আহত মনসুরের হত্যা নিশ্চিত করতে গ্রেফতার জাহাঙ্গীর তার মাফলার দিয়ে মনসুরের গলায় পেঁচিয়ে গাছের ডালের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেন। ঘটনার পরদিন সকালে মৃত মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বাগানে ঝুলন্ত স্বামীর লাশ দেখতে পান। স্বামীকে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বের হতে দেখেছিলেন মেঘনা। তাই এ জাহাঙ্গীরকে হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হয়। পরে গত ১৭ নভেম্বর নিহতের বাবা বদের আলী ওরফে বুদু কবিরাজ বাদী হয়ে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর ও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তবে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী ও মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীর আড়ালে থেকে যান। গ্রেফতার জাহাঙ্গীর হত্যাকান্ড ঘটিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে সাভারের হেমায়েতপুরে আত্মগোপন করেন। এখানে একটি গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করেন। তবে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গভীর তদন্তে সামনে আসে। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।