সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ যানের যুগে বাংলাদেশ

জিন্নাতুন নূর

বিদ্যুৎ যানের যুগে বাংলাদেশ

আসছে ২৮ ডিসেম্বর, অর্থাৎ আর এক দিন পর বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রের মতো এবার বাংলাদেশেও পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক এই যান ব্যবস্থার সূচনা হচ্ছে।

মেট্রোরেল প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালাতে প্রতিদিন লাগবে প্রায় ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। মেট্রোরেল পরিচালনায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার না হওয়ায় এটি হবে পরিবেশবান্ধব। এতে জ্বালানি হিসেবে ডিজেলের মতো জ্বালানি না থাকায় কোনো লুব্রিকেন্টও ব্যবহার হবে না। ফলে ইঞ্জিন থেকে চুইয়ে চুইয়ে তেল বা মবিল পড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না।  মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সারা দেশে যতগুলো গ্রিড আছে মেট্রোরেলের সঙ্গে প্রতিটির সংযোগ আছে। একটা গ্রিড ফেল করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য গ্রিডে সুইচ করবে। কোনো বড় বিপর্যয়ের কারণে দেশের সবকটি গ্রিডের ইলেকট্রিসিটি যদি ফেল করে তারপরও মেট্রোরেলে নিজস্ব জেনারেটর ট্রেনগুলোকে নিকটস্থ স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাবে। মেট্রোরেল পরিচালনায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে উত্তরা ডিপো এবং মতিঝিল এলাকায় দুটি রিসিভিং সাবস্টেশন থাকবে। মতিঝিল রিসিভিং সাবস্টেশনে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিডিটেডের মানিকনগর গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভি’র দুইটি পৃথক সার্কিট এবং উত্তরা রিসিভিং সাবস্টেশনে পিজিসিবি’র টঙ্গী গ্রিড সাবস্টেশন হতে ১৩২ কেভি’র একটি সার্কিট ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই লিমিটেডের উত্তরা গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভি’র অপর একটি সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ করা হবে। উভয় রিসিভিং সাবস্টেশনে ব্যাকআপ হিসেবে একটি করে অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার থাকবে। এছাড়াও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ডেসেকার ৩৩ কেভি সাবস্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া মেট্রোস্টেশনে ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকবে। কোনো কারণে কোনো সময় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া না গেলে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া আছে। তখন মেট্রোরেলের এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মেট্রোরেলকে নিকটবর্তী স্টেশনে নিয়ে আসা হবে। ইএসএস মূলত ব্যাটারি ব্যাকআপ সিস্টেম। যা মেট্রোরেলের রিজেনারেটিভ ব্রাকিং এনার্জি দিয়ে নিয়মিত চার্জ হতে থাকবে।

দেশের প্রথম এই উড়াল মেট্রোরেল পরিচালনায় ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম (ওসিএস) ১৫০০ ভোল্ট ডিসি ব্যবহৃত হবে। মেট্রোরেল প্যান্টোগ্রাফ এর সাহায্যে ওসিএস থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাবে। মেট্রোরেল চালানোর জন্য প্রতিদিন ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চালাতে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে। তবে শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাগবে প্রায় ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল, সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ট্র্যাক মো. জাকারিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেট্রোরেলের জন্য বিদ্যুৎ আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে নিচ্ছি। ১৩২ কেভি জাতীয় গ্রিড থেকে নিয়ে এসে মেট্রোরেল পরিচালনা করব। সাধারণত লোডশেডিং যখন হয় সেটা ফিডারে, ৩৩ কেভিতে হয়। ন্যাশনাল গ্রিডে লোডশেডিং হয় না। এজন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে আমরা গ্রিড থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ নিচ্ছি। সাধারণত দেশে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয় না হলে বা ব্ল্যাক আউট না হলে মেট্রোরেল পরিচালনায় কোনো বিঘ্ন হবে না। মেট্রো স্টেশনগুলোতে আলোকসজ্জার জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর