মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

বাবাকে হত্যায় মায়ের সাজা, জেল খাটবে ছোট্ট ফাতেমাও!

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী সহিদ হোসেনকে শ্বাসরোধে হত্যা করায় আমেনা বেগমের ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে বেদনাদায়ক ঘটনা হলো তার সঙ্গে তার ১৬ মাস বয়সী শিশুকন্যা ফাতেমা আক্তার মারিয়াকেও জেল খাটতে হবে। রায়ের পর আমেনার চোখগুলো হতাশায় নিমজ্জিত দেখা গেলেও আদালত পাড়ায় উপস্থিত লোকজন তাকিয়ে ছিল ছোট্ট শিশুটির দিকে। নিষ্পাপ শিশুটিও চারদিকে মানুষজনকে দেখছিল। গতকাল দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় প্রদান করেন। একই সঙ্গে আমেনার ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রায়ের সময় আসামি আমেনা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার কোলে দুধের শিশু ছিল। আমেনা তার সঙ্গে কারাগারে রাখতে চাইলে শিশুটিকেও রাখতে পারবে। পরিবার ও আদালত সূত্র জানায়, সহিদের মৃত্যুর সময় দণ্ডপ্রাপ্ত আমেনা গর্ভবতী ছিলেন। মৃত্যুর পর তার কোলজুড়ে কন্যা শিশুর জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় ফাতেমা আক্তার মারিয়া। এখন তার ১৬ মাস বয়স। ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে। সেখানে সহিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে সহিদের ভাই আবদুল আলী খোকনের লিখিত অভিযোগটি পরবর্তীতে মামলা হিসেবে রুজু করা হয়। ২৯ এপ্রিল রায়পুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তখনো শিশু মারিয়া আমেনার কোলে ছিল। পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে এতদিন তিনি মুক্ত ছিলেন। সোমবার রায়ের সময় শিশু মারিয়াকে নিয়েই আমেনা আদালতে উপস্থিত হন। দুধের শিশু হওয়ায় রায়ের পর মায়ের সঙ্গে তাকেও কারাগারে যেতে হয়েছে। তাদের সংসারে আরও তিন ছেলে রয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত আমেনা বামনী ইউনিয়নের বামনী গ্রামের মমিনুল হকের মেয়ে। তার স্বামীর বাড়িও একই এলাকায়। এজাহার সূত্র জানায়, সহিদ বামনী গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। জীবিকার তাগিদে সহিদ দীর্ঘ সময় প্রবাসে ছিলেন। অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশে চলে আসেন। এর পর থেকে আমেনার সঙ্গে তার পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়। ২০২১ সালের ২২ মার্চ রাতের খাবার শেষে তারা ঘুমাতে যান। পরদিন সকালে আমেনার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ঘরে ঢুকে সহিদকে মৃত দেখতে পায়। পরে স্বাভাবিক মৃত্যু ভেবে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গোসল করানোর সময় শরীরে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় সহিদের ভাই আবদুল আলী খোকন বাদী হয়ে রায়পুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে। এতে সহিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। পারিবারিক কলহের জের ধরে মুখ চেপে ধরে আমেনা সহিদকে হত্যা করে। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আমেনার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেন। শিক্ষানবিশ আইনজীবী ফখরুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকেও তার মায়ের সঙ্গে কারাগারে যেতে হয়েছে। এটি সবচেয়ে বেদনাদায়ক। তার দিকে তাকাতেই বুকের ভিতর হাহাকার করে উঠেছে। মায়ের অপরাধের কারণে তাকেও কারাবন্দি থাকতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর